গাজীপুরের রুপা গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ- এসপি বাসে দ্বগ্ধ-ওসি

Slider টপ নিউজ

1_218324

গাজীপুর: ৪ফেব্রুয়ারী রাত পৌনে ৮টায় গাজীপুরে পেট্রোল বোমা হামলায় আহতদের মধ্যে রুপা নামে ১১ বছরের শিশুর অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়ার ঘটনাস্থল গ্যাসের চূলা না বাস তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ সুপার বলছেন, গ্যাসের চূলায় রুপা দ্বগ্ধ। ওসি বলছেন, বাসে বোমা হামলায় সে দ্বগ্ধ হয়েছে।

বুধবার(১১ ফেব্রুয়ারী) বিকাল ৩টা ৪১ মিনিটে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ হারুনর রশিদ গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে ওই কথা বলেন।

এসপি বলেন, রুপা গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ হয়েছে। প্রতারণা করে তাকে বাসের বোমা হামলায় দ্বগ্ধ বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে রুপা গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ হয়েছে এটাই সঠিক।

বাসে বোমা হামলা মামলার প্রধান তদন্ত কমকতা জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকতা(ওসি) রেজাউল হাসান  বলেছেন, রুপা বাসে পেট্রোল বোমায় দ্বগ্ধ হয়েছে। রুপার মায়ের বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। জামায়াত-শিবির ছাড়া ১৬ কোটি মানুষ তা দেখেছে। একটি ছোট শিশু দ্বগ্ধ হওয়ার বিষয় নিয়ে কে কি বলল তা দেখার বিষয় নয়। সে বাসে পেট্রোল বোমায় দ্বগ্ধ এটাই সঠিক।

পুলিশ জানায়, ৪ফেব্রুয়ারী রাত পৌনে ৮টায় গাজীপুর পুলিশ লাইনের অদূরে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের নলজানীতে একটি যাত্রীবাহী বলাকা পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুবৃত্তরা। এতে কমপেক্ষে ৬জন অগ্নিদ্বগ্ধ হয়। আহতদের গাজীপুর সদর হাসপাতালে ভতি করা হয়। এদের মধ্যে ৫জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বান ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। আহতদের মধ্যে একজন অগ্নিদ্বগ্ধ শিশু। তার নাম মরিয়ম আক্তার রুপা(১১)। সে বতমানে বান ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রুপা তার মায়ের সঙ্গে গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকায় জনৈক জয়নাল মিয়া বস্তিতে ভাড়ায় থাকতো। মা পোষাক শ্রমিক। কয়েক বছর আগে বাবা খোক মিয়া মারা যান।

জয়নালের বিস্ততে গিয়ে দেখা যায়, রুপাদের ঘরে তালা দেয়া। রুপার খালু আবুল কালাম জানান, ৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার পর রুপা তাদের বাসার গ্যাসের চূলায় আগুন পোহাতে গিয়ে পুঁড়ে যায়। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গাজীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৩ ফেব্রুয়ারী বেলা ১২টা ৩০মিনিটে মরিয়ম আক্তার রুপাকে ভতি করা হয়। তার টিকিটের সিরিয়াল নম্বর ৬০৯৭/৯। ভতির সিরিয়াল নম্বর ১১৪৭/০৭। তবে টিকিটের সিরিয়ালে বয়স ১১ ও ভতির রেজিষ্টারে বয়স ৭ বছরে এবং পিতার নাম খোকন বলে উল্লেখ রয়েছে।

রুপাকে ভতির সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত জরুরী বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নাস মফিজ উদ্দিন জানান, রুপা গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিলিজ করা হয়েছে।

একটি অসমথির সূত্র বলছে, ৩ ফেব্রুযারী বিকালে গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ রুপার চিকিৎসার জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতালের সমাজ সেবা বিভাগ ৫ হাজার টাকা সাহায্যও প্রদান করে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৩ ফেব্রুয়ারী রুপাকে হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাসায় না নিয়ে অন্য কোন স্থানে রাখা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বান ইউনিটে ভতি করা হয়। একই দিন রাত পৌনে ৮টায় গাজীপুরে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় ৬ জন দ্বগ্ধ হয়। দ্বগ্ধদের গাজীপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পূবেই গনমাধ্যমে গাজীপুরে বাসে দ্বগ্ধ রুপার নাম ও ছবি প্রচার শুরু হয়। টিভিতে দেখার পর এই নিয়ে রুপার ভাড়া বাসস্থান বরুদা এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এই প্রসঙ্গে রুপার খালু আবুল কালাম বলেন, ৩ তারিখে রুপা গ্যাসের চূলায় অগ্নিদ্বগ্ধ হয়েছে। ৪ তারিখ দুপুরে আমি তাকে দেখতে গাজীপুর সদর হাসপাতালে যাই। কিন্তু রুপা ও তার মাকে হাসপাতালে পাই নি। রুপার মার মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাই।

আবুল কালাম আরো জানান, গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ রুপাকে তার মা সহ টিভিতে গাজীপুরে বাসে দ্বগ্ধ হয়েছে বলে প্রচার শুরু হয়। এই খবর দেখে তিনি সহ বরুদা এলাকার লোকজন হতভম্ব হয়ে যান।

গাজীপুর সিটি কপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ২৮ নং ওয়াডের (বরুদা এলাকা) কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূইয়া  বলেছেন, রুপা নিজ বাসায় গ্যাসের চূলায় দ্বগ্ধ হয়েছে। এটাই সঠিক। আই তদন্ত করে দেখেছি। সে বাসে বোমা হামলার ঘটনার একদিন আগে দ্বগ্ধ হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, টাকার লোভে রুপার মা নিজের মেয়েকে বাসে দ্বগ্ধ হওয়ার দাবি করছেন। আর আহত রুপা এতিম শিশু হওয়ায় গনমাধ্যমেও খবরটি ফলাও ভাবে প্রচার হয়।

এদিকে একটি সরকারী গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ৪ ফেব্রুয়ারী গাজীপুরে বাসে পেট্রোল বোমা হামালায় অগ্নিদ্বগ্ধদের বিষয় খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। কে কোথায় কি ভাবে আহত হয়েছেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *