গ্রুপিং হওয়ার সময় সবার চোখ ছিল এক গ্রুপের দিকে। কোনো দ্বিধা ছাড়াই সবাই এ গ্রুপকে আখ্যায়িত করেছিল ‘গ্রুপ অব ডেথ’, মানে মৃত্যু কূপ। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের এই গ্রুপে ছিল পরাশক্তি জার্মানি, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও হাঙ্গেরি। এর চেয়ে পরীক্ষিত মৃত্যুকূপ হয়তো আর হয় না।
অনুমিতভাবে এই গ্রুপের লড়াইটা হয়েছে বেশ। জিবে পানি আনার মতো কিছু ম্যাচ পাওয়া গেছে এখানে। ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করে ফ্রান্স। সমান ম্যাচে সমান চার পয়েন্ট ছিল জার্মানি ও পর্তুগালের। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ রানার্স আপ জার্মানি। সেরা তৃতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোতে নাম লেখায় রোনালদোর পর্তুগাল। দুই ম্যাচে ড্র করে দুই পয়েন্ট পাওয়া হাঙ্গেরি নেয় বিদায়।
কে জানত শেষ ষোলোতেই বিদায় নেবে মৃত্যুকূপ থেকে আসে ফ্রান্স, জার্মানি ও পর্তুগাল। খুব কম লোকই তা ভেবেছিল। কিংবা ভাবেনি আসলে কেউই। কিন্তু রোমাঞ্চ ছড়ানো কিছু ম্যাচে তাই দেখা গেছে। শেষ ষোলোর বৈতরণী পার হতে পারেনি এই তিন দল। বিদায় নিয়েছে সবাইকে অবাক করে।
তাহলে এবারের ইউরোর শিরোপা জিততে চলেছে কোন দল। সেই দিক বিবেচনায় এগিয়ে ইংল্যান্ড ও স্পেন। সঙ্গে আছে ইতালিও। কিন্তু এগুলো তো কাগুজে হিসাব। আন্ডারডগ হিসেবে যে চমক দেখাবে না ইউক্রেন, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড কিংবা ডেনমার্ক, তা কে বলতে পারে।
একই রাতে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় পর্তুগাল ও নেদারল্যান্ডস। চেক রিপাবলিকের কাছে ২-০ গোলে হারে ডাচ শিবির। রাতের খেলায় পর্তুগাল ১-০ গোলে হেরে যায় বেলজিয়ামের কাছে।
পরের দিন ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে হারতে হারতে জিতে হাফ ছেড়ে বাঁচে স্পেন (৫-৩)। দ্বিতীয় খেলায় চমক দেখায় সুইজারল্যান্ড। বারবার পিছিয়ে পড়েও নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩ গোলে ড্র। অতিরিক্ত সময়ে গোল হয়নি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে সুইসরা দেখায় চমক। এমবাপের একটি শটে মিসে কোয়ার্টারে যায় সুইজারল্যান্ড। বিদায় নেন ফ্রান্স।
জার্মানির বিদায় ইংল্যান্ডের কাছে। ওয়েম্বলিতে পুরো ম্যাচে গোলের দেখা না পাওয়া ইংল্যান্ড শেষের দিকে ঝলসে ওঠে। হ্যারি কেইন ও স্টারলিংয়ের গোলে জার্মানদের পত্রপাঠ বিদায় দেয় ইংলিশ শিবির। একই রাতে চমক দেখায় ইউক্রেন। সুইডেনকে শেষ মুহূর্তের গোলে বিদায় করে দেখায় শেভচেঙ্কোর দল।
আগামী দুই জুলাই থেকে শুরু হবে সেমিতে যাওয়ার লড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালের লাইন আপ চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। পরস্পরের মোকাবেলা করবে সুইজারল্যান্ড-স্পেন, ইতালি-বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক-ডেনমার্ক ও ইউক্রেন-ইংল্যান্ড।
প্রথমবারের মতো ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা ইংল্যান্ডের জন্য খুবই মসৃণ। কারণ ইউক্রেন বাধা টপকাতে পারলে তাদের সামনে সেমিতে আসবে চেক রিপাবলিক কিংবা ডেনমার্ক। যা ইংল্যান্ডের জন্য স্বস্তিকর। তবে অপর প্রান্ত থেকে ফাইনালে আসার রাস্তাটা খুবই কঠিন ইতালি, স্পেন ও বেলজিয়ামের জন্য।
সুইস বাধা পেরুতে পারলে সেমিতে স্পেনের সামনে দাঁড়াবে বেলজিয়াম কিংবা ইতালি। এখনকার জয়ী দল যাবে ফাইনালে। সব মিলিয়ে পরিসংখ্যান আর চলতি আসরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এবারের ইউরো শিরোপা জয়ের এখন অবধি দাবিদার এক দিক থেকে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে স্পেন ও ইতালি। এর মধ্যে অন্য দলগুলো যদি বাড়তি রোমাঞ্চ তুলে রাখে, তাহলে ভিন্ন বিষয়। অন্য রকম উত্তেজনা আর রূপকথার গল্প দিয়েই হয়তো তখন শেষ হবে চলতি ইউরো ফুটবল।