প্রতিক্রিয়া: ‘আমলানির্ভরতা বেড়েছে চার কারণে’

Slider জাতীয়


ঢাকা: চার কারণে আমলাদের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে বলে মনে করেন সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, আমলাদের বিষয়ে জাতীয় সংসদে রাজনীতিবিদদের দেওয়া বক্তব্য যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে চার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এক. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো তার দলের সিনিয়র নেতাদের আস্থায় নিতে পারছেন না।

এ কারণে অনেক সিনিয়র নেতা মন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি। দুই. দলের অনেক জুনিয়র নেতাকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়েছে; তাদেরও খুব আস্থায় নিতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী। তিন. জাতীয় সংসদ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেনি। সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রভাব বেশি। চার. গত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে ভোটারবিহীন নির্বাচন বলে মনে করেন।

এসব কারণে আমলাদের ওপর নির্ভরতা বেড়ে থাকতে পারে। আর আমলানির্ভরতা কেন বাড়ছে-তা রাজনীতিবিদদের চিন্তা করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী না থাকলে, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এ ধরনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকে না।

আমলাদের নিয়ে সংসদ সদস্যদের মন্তব্য নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সচিব বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা সচিবদের উপরেই আছেন। এটা মনে রাখতে হবে। এখানে সন্দেহ করার সুযোগ নেই, কোনো বিভ্রান্তিও নেই। যারা গণকর্মচারী তারা কাজ করেন রাষ্ট্রযন্ত্রের। তারা জনগণের বেতনভুক্ত কর্মচারী।

তাদের সবসময় মনে রাখতে হবে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সরকারের নির্দেশনা মেনেই চলবেন। এটাই তাদের দায়িত্ব। তাদের কারও উপরে অবস্থান নেওয়া বা কারও নিচে অবস্থান নেওয়ার মধ্যে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যখন সাধারণ নাগরিক হিসাবে দেখি তখন মনে হয়, জাতীয় সংসদে রাজনীতিবিদরাই মাইনরিটি। পার্লামেণ্ট চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই, তা ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। কেন রাজনীতিবিদরা মনে করছেন তাদের রাজনীতি ম্লান হচ্ছে? কেন তারা জনগণের আস্থাভাজন হতে পারছেন না? কেন আমাদের নির্বাচন নিয়ে এত বিতর্ক? এসব বিতর্কের কারণেই তো রাজনীতিবিদরা বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলেন-প্রত্যেক জেলায় সচিবরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন এবং জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) ত্রাণ বিতরণ ও এ সংক্রান্ত সেবা তারা দিবেন। এসবই হয়েছে কোভিডকে কেন্দ্র করে।

কোভিডের সময় এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার কারণ হতে পারে, অনেক রাজনীতিবিদ মাঠে যেতে চাচ্ছিলেন না। তাদের কোভিডমুক্ত রাখার চিন্তা থেকেও হতে পারে। কেননা অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদ কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছিলেন, অনেকে মারাও গেছেন। এসব বিষয় চিন্তা করেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে। ওই সময় ত্রাণ বিতরণে অনেক রাজনীতিবিদের দুর্নীতির খবরও আসছিল।

তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু হয়েছিল। দুর্নীতির সঙ্গে যাতে রাজনীতিবিদদের নাম না আসে সেজন্য গণকর্মচারীদের (ডিসি) এতে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। ডিসিরা যেহেতু ত্রাণ কার্য পরিচালনা করছেন সেহেতু তাদের সিনিয়র সচিবদের ওইসব কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন হতে পারে। এটা পুরো মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য করা হয়ে থাকতে পারে। এটার কারণে রাজনীতি ম্লান হচ্ছে এটা মনে করি না। আমি ভাবছি-রাজনীতি ম্লান হওয়ার আরও অনেক কারণ আছে। এটা প্রধান কারণ নয়।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন, এমপিরা বসে থাকেন-এ প্রসঙ্গে সাবেক এই আমলা বলেন, ‘আমি কয়েকটি ভিডিও কনফারেন্স দেখেছি। আমার তেমন মনে হয়নি। ডিজিটাল কনফারেন্সের যে সুযোগ ডিসি অফিসে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা হয়তো অন্য জায়গায় এখনো হয়নি। সে কারণে ডিসি অফিসেই কনফারেন্সটা হয়। তবে এমপিদের তো সামনেই বসে থাকতে দেখেছি।

কোভিড পরিস্থিতি যেহেতু ডিসিরাই মাঠে থেকে কাজ করছেন, ত্রাণ বিতরণ করেছেন, সে জন্য হয়তো তাদের কাছেই প্রধানমন্ত্রী শুনতে চান। জনপ্রতিনিধির কাছেও শুনেছেন। এতে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। তবে এতে যদি তারা মনে করেন ডিসিরা তাদের আন্ডারমাইন্ড করেছেন, সে বিষয়ে তারা সরকারের নজরে আনতেই পারেন। এসব বিষয় নিয়ে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের কোনো ব্যত্যয় বা বিভ্রান্তি ঘটলে অবশ্যই সরকারকে তার সমাধান করতে হবে। আমরা চাই না এ ধরনের বিভ্রান্তি ঘটুক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *