শনাক্তের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ধরন লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু-সংক্রমণ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


দেশে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। একদিনে শনাক্তের হার প্রায় ২৪ শতাংশ। মৃত্যুর লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১১২ জন। এটি একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মারা গেছেন ১১৯ জন। এর আগে গত ১৯ই এপ্রিল ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৩৮৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৬ জন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২৭ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন। দেশে প্রথম করোনার রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ই মার্চ এবং ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু ঘটে ওই বছরের ১৮ই মার্চে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনার নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬৫৯টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩১ হাজার ৯৮২টি। এখন পর্যন্ত ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৬৭ জন পুরুষ এবং নারী ৪৫ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ ১০ হাজার ২৫৩ জন এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ১৩৫ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৬০ বছরের উপরে ৬১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৪ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২২ জন, চট্টগ্রামে ১৬ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, খুলনায় ৩৫ জন, বরিশালে ৩ জন, সিলেটে ১ জন, রংপুরে ১০ জন এবং ময়মনসিংহে ৪ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২১ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ১৩ জন এবং হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে ১ জনকে।

এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৮ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৪২ জন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১২ জন। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৯ জন। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৪৬৭ জন। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৭ জন। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ১৯৩ জন। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫৮ জন। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

৮০ শতাংশই ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত: আইইডিসিআর
দেশে গত দুই মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশে ডেলটা ধরন পাওয়া গেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণায় এ চিত্র এসেছে। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গবেষণার এই ফল জানানো হয়। গত ৮ই মে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিআইএসএআইডি) বাংলাদেশে করোনার এই ধরন শনাক্তের খবর দেয়া হয়। এর নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। সেখানে বলা হয়, গত ২৮ ও ২৯শে এপ্রিল সংগৃহীত নমুনা থেকে ডেল্টা ধরন মেলে। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এ ধরন পাওয়া যায়। তখন আইইডিসিআর সূত্র জানায়, ভারতে ভ্রমণ করে আসা কারও শরীরে এই ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) পাওয়া গেছে।

গতকাল আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, গত মে ও জুন মাসে জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৮০ শতাংশের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট এবং বাকিদের মধ্যে অন্য ক্রিয়াশীল ধরন পাওয়া গেছে। দেশের প্রায় সব এলাকা থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *