যে প্রজন্ম এনালগ-ডিজিটাল উভয়ের সাক্ষী— ডাঃ মাজহারুল আলম

বাংলার মুখোমুখি


আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, সে সময়ের কথা বলি—- স্মার্ট ফোন দূরের কথা, যোগাযোগের জন্য চিঠিপত্র ছাড়া কোন কিছুই ছিল না। ‘৮০র দশকে ডাক্তারী পড়ার সময় হোস্টেলে চার আনার তিনটা কয়েন ড্রপ করে বারান্দার ওয়ালের এনালগ সেট থেকে কখনো কখনো ফোন করে কথা বলতাম।

বিনোদনের বিচারে, এখনকার প্রজন্মের চেয়ে ছাত্রজীবনকে কিঞ্চিৎ কম উপভোগ করেছি— বলে তো মনে হয় না। মোবাইলে ব্রাউজিং করে ঘন্টার পর ঘন্টা পৃথিবী দেখি নি— তাতে তো আফসোস লাগে না, একবারও।

শিক্ষকদের প্রাণঢালা অদৃশ্য উপাদানগুলো, বড় ভাইবোনদের অনুপ্রেরনা, সমবয়সী সহপাঠীদের মায়াবী সংযোগ—– কালেভদ্রে শ্যামলি, গুলিস্তান, অভিসার, মধুমিতা, আনন্দ, বলাকা সিনেমা হলে ভাল ছবি আসলে সাথীদের সংগে যাওয়া, মাঠে খেলাধুলা —- এইতো সেদিনের মধুরতর জীবন! এসবের মজাই ছিল আলাদা। এগুলো সবই ছিল এনালগের আলাদা রকমের মিষ্টি স্বাদ। আজও ধারনা করি, ডিজিটালের বেগবান অবিশ্বাস ভরা মজার চেয়ে আমাদের মজা বেশি ছিল।

এনালগের জমিতে চাষ করা, আর ডিজিটালের কারখানায় কাজ করা—- এমন উভয়কালের একমাত্র সাক্ষী হিসেবে যে প্রজন্মটি পৃথিবীতে একমাত্র প্রজন্ম সেটাই আমাদের প্রজন্ম তাই আমাদের বর্ণনা অবিকল সত্য কাহন—তাতে যারা সন্দেহ করবে, তারা উভয় প্রজন্মকে দেখার সুযোগ পায় নি। বর্তমান প্রজন্ম আমাদেরটা দেখেনি, পূর্বের প্রজন্ম বর্তমান দেখেনি।
সুতরাং এনালগ—ডিজিটালের উভয়কাল দেখা ও অনু্ভব করার দুর্লভ সুযোগ একমাত্র আমাদের প্রজন্মই পেয়েছে। এটা আমাদের প্রজন্মের জন্য মহাকালের সৌভাগ্য।

কয়েন টেলিফোন সেটের অসহযোগিতার কারনে, চার আনার তিনটা কয়েন—- মাঝেমধ্যে মাঠে মারা যাওয়ার বেদনার কথা মনে হয়।
দিনগুলো ভাল লাগারই ছিল। এখনতো খোলা আকাশের বদলে স্মার্টফোনের স্ক্রীনে বন্দী হয়ে গৃহকোণে সময় কাটে—- সেই বয়সী কিশোর কিশোরীদের।

দিন বদলের হাওয়ায় আজ কি যেন হারিয়ে গেছে! আবার, কি যেন পাওয়া গেছে!
গোলক ধাঁধার ঘুরপাকে এমনই জমানায় আবর্তিত এক প্রজন্মের সদস্য আমি, আমরা —-যারা চার আনার কয়েন বক্সের ভালবাসা এবং অসীম নেট কানেকশনের বিনোদনের প্রত্যক্ষ মুসাফির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *