ঢাকার কদমতলী থানা এলাকার মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের একটি বাসা থেকে এক দম্পতি ও তাদের মেয়েসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পরিবারের বড় মেয়ে মেহজাবিন মুনকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই পরিবারের শিশুসহ আরও দুজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম (৪৫) ও মেয়ে জান্নাতুল (২১)। হাসপাতালে যে দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে তারা হলেন- নিহত মাসুদ রানার মেয়ে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪০) ও চার বছর বয়সী মেয়ে মারজান তাবাসসুম। শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ও শিশু তাবাসসুমকে ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ওই দুজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্ক মুক্ত।
কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জামাল উদ্দিন বলেন, সকালে পুলিশের জরুরি সেবা-৯৯৯ থেকে কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই।
নিহত মাসুদ রানার বড় মেয়ে মেহজাবিন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে নিজেই জানায়, বাবা-মা ও ছোট বোনকে খুন করেছি। আমাকে আইস্যা ধইরা নিয়ে যান। পরে ২৭৪/১, লাল মিয়া সর্দার রোডের পাঁচতলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাট থেকে ৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। প্রত্যকটি মরদেহের হাত-পা বাঁধা ছিল। তাদের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঠিক কী কারণে বা কীভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, মাসুদ রানার বড় মেয়ে মেহজাবিন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মেহজাবিনের ধারণা ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামী শফিকুলের পরকীয়ার সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে মেহজাবিন তার মা-বাবার কাছে বিচার দিয়েছিলেন। মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটিও হয়। এছাড়া বাবার সম্পত্তির ওপরে মেহজাবিনের লোভ ছিল। তিনি একাধিকবার সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য বাবা-মাকে চাপ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। সম্পত্তি লিখে না দেয়াতে পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। এছাড়া আরেকটি সূত্র বলছে, নিহত মাসুদ রানার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম সাবেক এক বিএনপি নেতার ব্যক্তিগত সহকারী হত্যা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ ছিল। গৃহকর্তা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন।
আটক মেহজাবিনের দেয়া তথ্যানুসারে পুলিশ আরও জানায়, বাবা প্রবাসে থাকায় মেহজাবিনের মা তাদের দুই বোনকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন। নিজের বিয়ের পর মা ও অপর বোন জান্নাতুলের এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ না করায় মেহজাবিনের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায়। বাবা মাসুদ রানা প্রবাসে একটি বিয়ে করাতেও ক্ষোভ জন্ম নেয় বাবার প্রতি। ৩ মাস আগে মাসুদ রানা দেশে এসে ওই বাসায় ওঠেন। অন্যদিকে নিজের সংসারেও কলহ লেগে থাকতো মেহজাবিনের। এসব বিষয় নিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাসা কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে স্ত্রী সন্তানসহ তিনি শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। যাওয়ার সময় তিনি আম কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান। রাতে তার স্ত্রী মেহজাবিন নুডলসসহ আরও অনেক কিছু খেতে দেন। রাতে তিনিসহ শ্বশুরবাড়ির সবাইকে চা খেতে দেন মেহজাবিন। এরপরে কি হয়েছে তিনি আর কিছু বলতে পারেন না। শফিকুল পুলিশকে জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির কারও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না তিন মাস ধরে। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকতো।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। পরীক্ষার জন্য সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। এতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। পুলিশের ধারণা-মেহজাবিন পরিবারের সবাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে খাবারের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু খাইয়েছেন। তবে কী খেয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না।