ঢাকায় আসছে আরেক ঢেউ!

Slider ঢাকা

এক সপ্তাহের ব্যবধানে একদিনে রাজধানী ঢাকায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। অথচ এর এক সপ্তাহ আগে গত ১২ জুন সংক্রমণ হার ছিল ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। করোনার সংক্রমণ শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই বেড়েছে। বর্তমানে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে খুলনা বিভাগে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে ঢাকায় করোনা ভাইরাসের আরেকটি ঢেউ আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীর পরিস্থিতি গত মার্চ-এপ্রিলের মতো হতে পারে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে করোনা ভাইরাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল রাজধানীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা। তখন করোনা রোগীদের হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। যদিও গতকাল শনিবার ঢাকায় কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল শয্যার ৬৮ শতাংশ খালি পড়ে আছে। তবে এ সংখ্যাও কমে আসছে। কয়েক দিন আগেও খালি সংখ্যা ছিল ৭৭ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৭ জন। গেল এক সপ্তাহে রোগী শনাক্ত ৫৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছে আরও ৬৭ জন।

গত এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৬ শতাংশের বেশি। গেল সপ্তাহে নতুন রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতা সবই বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে খুলনা বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণের ৬৭তম সপ্তাহ (১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত) শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহে করোনার ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৪০টি নুমনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৫৪১ জন। একই সময়ে মারা গেছে ৩৯৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১৬ হাজার ১২২ জন। এর আগের সপ্তাহে (৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত) করোনার এক লাখ ২২ হাজার ১০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১৭২ জন। একই সময়ে মারা গেছে ২৭০ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৯ জন।

করোনার সাপ্তাহিক সংক্রমণ পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র বলছে- দেশে এক সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ, নতুন রোগী শনাক্ত ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, মৃত্যু ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সুস্থতা ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা, নতুন রোগী শনাক্ত, মৃত্যু এবং সুস্থতা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ বাড়ছে ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে। বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় গত ৮ মে। ওই দিন ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে এ ভাইরাস পাওয়া যায়। এর পর থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশি ছড়ালেও বর্তমানে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এই মাসের শুরুতে জানিয়েছিল যে, গোটা দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে গত কয়েক মাস ধরে মহামারীতে বিপর্যস্ত করার জন্য দায়ী এ ধরনটিকে এখন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই ব্যাপক আকার ধারণ করছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় একদিনে সংক্রমণ হার বেড়েছে আড়াইগুণ।

তথ্য বলছে, গত ১২ জুন একদিনে রাজধানীতে তিন হাজার ৬৪২টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ২১২ জন। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এক সপ্তাহ পর গতকাল একদিনে ৭ হাজার ৮৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১১৪ জন। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ঢাকায় করোনা রোগী শনাক্তের ৬৮ শতাংশই হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগী বলছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে প্রথমপর্যায়ে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়লেও এখন সংক্রমণ বেশি বাড়ছে খুলনা বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এক হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত ৬২৫ জন এবং নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিভাগ পর্যায়ে এটি সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এক হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৩৪৫ জন। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৩৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১৩ জন। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ১৩ জন।

রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ৯ হাজার ১৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে এক হাজার ৪১১ জন। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ৪৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৫৩ জন এবং নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় দুই হাজার ৫৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৪০১ জন এবং নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২০৫টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৫৬ জন এবং নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৪৮০টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৫৩ জন এবং নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৪টি। এর মধ্যে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৭ জন। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ৬৩ লাখ ৫ হাজার ৫০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে আট লাখ ৪৮ হাজার ২৭ জন। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬৭ জন। এর মধ্যে ৩৪ পুরুষ এবং ৩৩ নারী। ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ২৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন রয়েছে। মৃতদের অঞ্চল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রামে ১১, রাজশাহীতে আট, খুলনায় ২৪, সিলেটে একজন, রংপুরে আট এবং ময়মনসিংহে একজন রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৭২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫, রংপুর বিভাগে ৩৬, খুলনায় ১৯২, বরিশালে ৩৬, রাজশাহীতে ১১০, সিলেটে ৭২ জন এবং ময়মনসিংহে পাঁচজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *