রাতে বিভিন্নস্থানে পেট্রলবোমা ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ২৩

Slider টপ নিউজ

cocktil_file_photo_SM_363818809

ঢাকা: চলমান অবরোধের মধ্যে ৭২ ঘণ্টা হরতালের আগের রাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ আহত হয়েছেন ২৩জন। ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজারসহ কয়েক জেলায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২জন আহত এবং হাতবোমাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ৭জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রূপিহার এলাকায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারীসহ ৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ায় যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাংচুরে ৫ জন আহত হয়। এদিকে ময়মনসিংহ শহরের টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা মেরেছে দুর্বৃত্তরা। রাত পৌনে ১১টার দিকে এতে বাসের ৩ যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মো. ফজলুল করিম জানান, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়াও ময়মনসিংহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়ে শহরের এসব পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ওদিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে একটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাত ৮টা ৫ মিনিটে রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় সিঁড়ির নিচে বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরিত হলে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এ সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। স্টেশনে অবস্থানরত লোকজন দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় জিআরপি পুলিশ কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়ে। একই সময়ে সাহেব বাজার মণিচত্বর এলাকায় দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। স্প্রিন্টার লেগে আহত হয়েছেন ৩ জন। আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওদিকে বগুড়ায় ককটেল ও পেট্রল বোমাসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি নিবন্ধনহীন বাজাজ প্লাটিনাম মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুর-এ-আলম সিদ্দিকী, এসআই আনোয়ার হোসেন ও উপ-শহর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিরুল ইসলামসহ একদল পুলিশ বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের ঝোপগাড়ী এলাকার ট্যাংক ব্রিজের কাছে দায়িত্ব পালন করার সময় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেলের পথরোধ করেন। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা দুইটি ব্যাগ তল্লাশি করে ১২টি তাজা ককটেল, ২টি পেট্রল বোমা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাত পৌনে ৯টার দিকে বগুড়া সদরের গোদারপাড়ায় একটি খালি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওদিকে হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় বরগুনা জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইফতেখার হাসান ফরিদসহ এক শিবির কর্মীকে আটক করেছে বরগুনা থানা পুলিশ। রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করা হয়। রাজধানীর বঙ্গবাজারে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া ককটেলে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। হামলা করে পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে ২ দুর্বৃত্ত। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাড়ে ৬টার দিকে বঙ্গবাজার ইউনূস টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। রাজধানীর শাহবাগের ছবিরহাটে ককটেল বিস্ফোরণে পাঁচজন আহত হয়েছে। রাত পৌনে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, মঞ্চের পাশে ছবিরহাটে ককটেল বিস্ফোরণে ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, রাজধানীর বকশিবাজারে একটি ভাতের হোটেলে ককটেল বিস্ফোরণে রাজিব হোসেন নামে এক যুবক আহত হয়েছেন। রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

৭২ ঘণ্টার হরতাল শুরু, পেছালো পরীক্ষা
অবরোধের পাশাপাশি আজ সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী ফের শুরু হচ্ছে বিরোধী জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার হরতাল। এর ফলে রোববার ও মঙ্গলবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আবারও পেছানো হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে রোববার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। দেশব্যাপী ক্রসফায়ারে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী হত্যা, গুলি করে নেতাকর্মীদের পঙ্গু ও আহত, নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এ হরতাল ডাকা হয়। ওদিকে দলের দুই নেতা হত্যার প্রতিবাদে রোববার সকাল-সন্ধ্যা দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে ছাত্রশিবির।

আবারও পেছালো এসএসসি পরীক্ষা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, আবারও পেছালো এসএসসি পরীক্ষা। ২০ দলীয় জোটের ৭২ ঘণ্টার হরতালের কারণে দুটি দিনের পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৮ই ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা হবে ১৩ই ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে ১০ই ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা হবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এই সময় তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে আরও বলেন, পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোন দিন হরতাল দেন। আমরা চাইলে পরীক্ষা চালিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আপনাদের নাশকতা দেখে সেই সাহস পাচ্ছি না। আমরা স্কুলের ছেলেপেলেদের বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ও সময়সূচি অনুযায়ী ৮ই ফেব্রুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও সমমানের ইংরেজি প্রথমপত্রের (আবশ্যিক) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টায়। চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। একইভাবে ১০ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের আবশ্যিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি শনিবার। সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলবে এই পরীক্ষা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি বিরোধী দল পরীক্ষার আগে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আর পরের ২ ঘণ্টা হরতালের আওতামুক্ত রাখা হবে। তাদের কাছে এখন পরীক্ষা বড় নয়। হরতালই বড়। এসব কথা বলে লাভ নেই। ওরা শিক্ষার কোন মূল্য দেবে না।
মন্ত্রী জানান, বহু আগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও বিএনপি নেত্রী হরতাল ডেকে বসে থাকলেন। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে হরতাল চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমি আশা করেছিলাম শনিবারের মধ্যে তারা হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়েছি। যেভাবে পেট্রল বোমা মারা হচ্ছে তাতে বাচ্চাগুলোকে নাশকতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না বলে এই নতুন তারিখ ঘোষণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহজাহান, সচিব পীযূষ দত্ত ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান উপস্থিত ছিলেন।

আজ থেকে ঢাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকলো ছাত্রদল
আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত না করা এবং অযোগ্য ভিসি আরেফিন সিদ্দিকীর পদত্যাগের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এক বিবৃতিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে সহাবস্থান এখন নির্বাসিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আল্টিমেটাম দিলেও তার কোন সুফল সরকারি ছাত্র সংগঠন ব্যতীত অন্য কেউ পায়নি। এর অন্যতম কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একজন দলকানা ভিসির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রলীগের আজ্ঞাবহ এবং ছাত্রলীগের অপকর্মের দোসর ওই ভিসি এখন ছাত্রলীগকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকত্ব না করে ছাত্রলীগের অভিভাবক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *