কারামুক্ত হলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

Slider বিনোদন ও মিডিয়া


গাজীপুর:সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রথম আলোর জৈষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত থেকে জামিন পান তিনি। এ খবরে স্বস্তি এসেছে সাংবাদিক মহলে। জামিনের কাগজপত্র পেয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে বিকাল সোয়া চারটার দিকে তিনি কারামুক্ত হন। এর আগে ই-মেইলে তার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসে। আর এরপর রোজনিা পরিবারের ১৩ সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেন।

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট’ মামলায় বন্দী রয়েছেন প্রথম আলোর জৈষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। আজ রোববার সকালে এ মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে রোজিনাকে জামিন দেন। তার জামিনের খবরে গাজীপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে নেমে এসেছে স্বস্তি। সকাল থেকে অনেক সংবাদকর্মী কাশিমপুর কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেলার হোসনে আরা বীথি বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের কাগজপত্র এখনো অফিসিয়ালি আসেনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসলে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে আজ রোববার রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালত শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে তাকে তার পাসপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালতে দুপুর ১২টা ৫২ মিনিট থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত শুনানির পর বিকেল ৪টায় আজ রোববার আদেশের কথা বলা হয়। সেখানে বলা হয়, এদিন রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশ হবে। ওই দিন রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি, আমিনুল গনি টিটু, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রশান্ত কুমার কর্মকার ও আশরাফুল আলম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিনের বিরোধিতা করেন হেমায়েত উদ্দিন হিরন।

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে চুরি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

গত মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। এরপর রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রিজনভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী। সচিবালয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর সোমবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *