অনলাইনে ভোটার আবেদন সাময়িক বন্ধ রাখার ভাবনা

Slider জাতীয়

ঢাকা: অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছয় মাস এ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হতে পারে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমকে সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কমিশন। তবে বিষয়টি প্রস্তাবনা আকারে রয়েছে, কমিশন এখনো অনুমোদন দেয়নি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভোটার তালিকা হালনাগাদ তদারকি কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ১১ লাখ নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। তারা এতদিন পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। আবার এখন হালানাগাদ ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। অফলাইনে ব্যস্ত থাকতে হবে কর্মকর্তাদের। তাই নতুন করে অনলাইনের চাপ নিতে চাচ্ছেন না তারা।

এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, আগামী ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি ভাগে কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হবে।

ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

এতে বলা হয়েছে, এবার তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে সংগ্রহ করা হবে। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে জন্মগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অর্থাৎ ১৬ বছর বয়সীদের তথ্যও নেওয়া হবে, তারা পরবর্তীতে বয়স ১৮ বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে। তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে।

এ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়েও কার্যক্রম গৃহীত হবে।

যে কাগজ-পত্র জমা নেওয়া হবে
নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূরণকৃত নিবন্ধন ফরম-২ এর সাথে অনলাইন জন্ম সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা বা যে কোনো পাবলিক পরীক্ষা পাশের সনদের ফটোকপি।

এছাড়াও অন্যান্য কাগজপত্র যেমন নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র/বাড়ি ভাড়া/হোল্ডিং ট্যাক্স/ যে-কোন ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রসিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।

ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩(কক) এ নামের সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদসমূহের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর অধীন নিবন্ধিত নাম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

হিজড়া
সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেওয়ায়, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন লাগবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি, তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তুর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর
এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা প্রদানের পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা হবে।

এছাড়া, তথ্যসংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।

তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক বা কর্মচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক বা কমচারী; সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বা সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন অফিস বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও সরকার কতৃক অনুমোদিত কিন্ডারগার্টেন ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

সুপারভাইজার নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ বা সমপর্যায়ের মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন।

তথ্য সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজার নিয়োগের বিধানে বর্ণিত ‘কর্মকর্তা’ বলতে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ‘কর্মচারী’ বলতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বোঝানো হয়েছে।

বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৬ জন। আর পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৪৫৪ জন।

সবচেয়ে বেশি তথ্য রয়েছে ঢাকা অঞ্চলের। এ অঞ্চলের মোট এক কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৭ জনের তথ্য রয়েছে ইসির কাছে। সবচেয়ে কম রয়েছে ফরিদপুর অঞ্চলে, ৫৩ লাখ ৯১ হাজার ২০৯ জন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৭ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। ভোটারদের তথ্যগুলো ইসির সার্ভারে সংরক্ষিত রয়েছে। আর সেখান থেকে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *