টিকা আনতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে এখন চলছে পরস্পরকে দোষারূপ। এতে বের হচ্ছে নানা অজানা তথ্য। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের টিকা আনার দায়িত্ব ছিল বেক্সিমকো ফার্মার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক গত রোববার বলেন, ভারত থেকে টিকা আনার দায়িত্ব বেক্সিমকোর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বললেন, ‘ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় বেক্সিমকোর চাপেই সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি। যদিও চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিল।’ বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল পাপন বললেন, টিকার জন্য আমরা অর্ধেক অর্থ পরিশোধ করেছি। অথচ সেরাম আমাদের টিকা দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত ভারতকে চাপ দেয়া। এ মুহূর্তে বেক্সিমকোর আর করার কিছু নেই।’
টিকা আনতে ব্যর্থ হয়ে এখন পরস্পরকে দোষারূপ করাকে খুবই অনভিপ্রেত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, দোষারূপ না করে টিকার সাথে জড়িত সব পক্ষকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের পাওনা টিকা কিভাবে আনা যায় তার জন্য। কারণ আমাদের টিকা প্রয়োজন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে টিকা সংক্রান্ত ত্রিপক্ষীয় একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, তৎকালীন স্বাস্থ্যসেবা সচিব আবদুল মান্নান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি সই করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ও সেরাম ইনস্টিটিউটের তিন কর্মকর্তা। বেক্সিমকো সেরামের এ দেশীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশকে এই টিকা সরবরাহ করবে বলে চুক্তিতে বলা হয়েছিল।
এ দিকে দেশব্যাপী প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গতকাল সোমবার ১ হাজার ৩১ জনকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৫১ জনকে। সরকারের টিকা মজুদ ফুরিয়ে আসছে বলে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
উপহারসহ ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা সরকারের হাতে ছিল। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ জনকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার যদি কাউকে প্রথম ডোজ টিকা না দেয়া হয় তাহলে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হলে আরো ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৪ ডোজ লাগবে। সরকারের হাতে গতকাল পর্যন্ত ছিল ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৬ ডোজ। ঘাটতি রয়েছে ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৮ ডোজ। স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল সারা দেশে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৫১ ডোজ টিকা দিয়েছে। এই ধারায় টিকা দেয়া হলে সরকারের কাছে থাকা মজুদ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।