রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বনানী থেকে অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টে জালিয়াতি চক্রের মূল হোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল কিট এবং রি-এজেন্ট সনদ জব্দ করা হয়। এসব কিট ও রি-এজেন্ট করোনা, এইডস, নিউমোনিয়া, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগের প্যাথলোজিক্যাল টেস্টের জন্য ব্যবহার করা হতো। এমন কি ‘এইডস’ রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে এই তালিকায়, যা তাদের সংরক্ষণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা (৪০), ম্যানেজার মো. শহীদুল আলম (৪২), ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাবরক্ষক মো. সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনোলজিস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. মাহমুদুল হাসান (৪০) এবং হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এসএম মোস্তফা কামাল (৪৮)।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় র্যাব-২ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, ২০১০ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামে সংগঠিত হয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে, অবৈধভাবে ও অসৎ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া মানহীন ও স্বল্প মেয়াদস্থিত টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টসমূহ বিদেশ থেকে আমদানি, সংরক্ষণ ও দেশব্যাপী বাজারজাতকরণ করতেন। যা সরবরাহ করার পর্যায়েই বস্তুত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেত।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত র্যাব-২ এর একটি দল মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী থানা এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড এবং হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামে ৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে অভিযান পরিচালনা করে। ঘটনাস্থলে আভিযানিক দল দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টসমূহের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তীকালে তাদের ওয়্যারহাউজে তল্লাশি চালালে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
তিনি আরো জানান, বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড এবং হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেড ছাড়াও কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করছে।
এ ছাড়া করোনা টেস্টিং কিটসহ ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল ডিভাইস মজুত ও বাজারজাত করে আসছে।
তিনি জানান, সেখানে মজুত বেশির ভাগ মেডিকেল ডিভাইস অননুমোদিত, সব ধরনের টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টস মেয়াদোত্তীর্ণ ও কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। এ সময় ৩টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীসহ চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, অধিক মুনাফার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ও সহসা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এমন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টসমূহ দেশি ও বিদেশি আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অতি অল্প দাম সংগ্রহ করে পুনরায় মেয়াদ বসিয়ে বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ বা টেম্পারিং করে বাজারে সরবরাহ করতো। প্রতিষ্ঠান ৩টি ১০ বছর ধরে বিভিন্ন নামে ঢাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
কাদের তারা এগুলো সাপ্লাই করতো এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এগুলো সাপ্লাই করতো। তারা চীন থেকে এগুলো আমদানি করতো। রি-এজেন্ট ও টেস্ট কিটের লেভেল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তৈরি করে পুনরায় টেম্পারিং করে লাগানো হতো। তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।