এত রোগীর জায়গা হবে কোথায়?

Slider সারাদেশ


ছবিঃ জীবন আহমেদহু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। টানা তিনদিন ধরে ৭ হাজারের উপরে রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুধু যে রোগী বাড়ছে তা নয়। রোগীদের অবস্থা নিমিষেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম দফার আঘাতে বয়স্কদের অবস্থা বেশি জটিল হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় তরুণ, যুবক, বয়স্ক কেউ ছাড় পাচ্ছেন না। আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে। অক্সিজেন লেভেল বিপদসীমায় নেমে যাচ্ছে।
ফলে রোগীদের অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্ট জরুরি হয়ে পড়ছে। বাসা থেকে সবার পক্ষে অক্সিজেন সাপোর্ট নেয়া সম্ভব না বলেই হাসপাতালমুখী হচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু ঢাকার হাসপাতালগুলো রোগীতে ঠাসা। রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনরা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে এক হাসপাতালের বারান্দা থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরছেন। ঢাকার বাইরের শ্বাসকষ্ট ও জটিল রোগীরাও ঢাকায় ঘুরছেন। সবাই একটি শয্যা চান। দিন দিন রোগী বাড়ায় হাসপাতালমুখীদের স্থান সংকুলানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনই রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত শয্যার ব্যবস্থা না করা গেলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক গতকাল বলেছেন, যেভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণহার বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে পুরো ঢাকা শহরকে হাসপাতাল বানানো হলেও মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। গতকাল মহাখালীতে ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

সাত দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ডিএনসিসি মার্কেট মূলত পাইকারি কাঁচাবাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটি বাজারে বাস্তবায়ন করা যায়নি। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে এই হাসপাতলটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ১ হাজার সাধারণ শয্যার পাশাপাশি ২০০টির মতো আইসিইউ সুবিধা থাকবে। থাকবে এইচডিইউ সুবিধা। সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই হাসপাতালে ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ সেবিকা ও ৭০০ স্টাফ থাকবেন। ওষুধ ও সরঞ্জাম দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি হাসপাতালের একটি অংশ চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে গত ২২শে মার্চ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ঢাকার লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও এসব হাসপাতালের মধ্য সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগে থেকেই করোনা রোগীদের সেবার ব্যবস্থা ছিল। এখন এই দুটি হাসপাতালকে আরো বড় পরিসরে সেবার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগে আইসিইউ সেবা চালু ছিল না। কিন্তু ওই নির্দেশনার পর ১০টি আইসিইউ সেবা চালু করা হয়েছে। ৯০টি সাধারণ শয্যা বাড়িয়ে ১৯০টি করা হয়েছে। পরের দিন আরেক নির্দেশনায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পুনরায় করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা চালু করার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকার হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগী সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিসাবের বাইরে আরো অনেক শয্যার সৃষ্টি করেছেন। কিছু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। করোনা ডেডিকেটেড সরকারি কিছু হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এসব হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদার কর্মকর্তারা বলেছেন আরো শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, হাসপাতালের স্টাফ ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত আছেন এমন ব্যক্তিদের স্বজনদের জন্য অনেকে সিটের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। অনেকে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাচ্ছেন।

ঢাকার বাইরে অনেক হাসপাতালে শয্যা খালি থাকলেও এসব হাসপাতালে জটিল কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হয় না। শ্বাসকষ্টের লেভেল কমে গেলেই এসব রোগীকে ঢাকার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *