চলার পথে নিপীড়নের শিকার ৮৮ শতাংশ কিশোরী

Slider বাংলার মুখোমুখি

চলার পথে অবিবাহিত কিশোরীদের ৮৮ শতাংশই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। এদের ১৯ শতাংশ শিকার হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিটিউট অফ পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং-নিপোর্ট এর জরীপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে সহযোগিতা করেছে আইসিডিডিআরবির রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স, আরডিএম এবং ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট, ডিফরআই।

বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে আনতে এই জরিপটি করা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয় জরিপের ফল।

মূল প্রতিবেদনে কিশোর-কিশোরীর গণমাধ্যম ব্যবহার, বিয়ে, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি, জেন্ডার-সম্পর্কিত সামাজিক আচরণ, সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্যবৈচিত্র্যের বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।

গবেষণা প্রতিনিধিত্বশীল করতে ৭২ হাজার ৮০০ পরিবারকে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৭ হাজার ৯৩টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই জরিপ করতে চার হাজার ৯২৬ জন বিবাহিত কিশোরী, সাত হাজার ৮০০ অবিবাহিত কিশোরী, এবং পাঁচ হাজার ৫২৩ অবিবাহিত কিশোরের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।

‘স্বামীর পিটুনির অধিকার আছে’

জরিপে অংশ নেয়া এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ শতাংশ) বিবাহিত কিশোরী এবং প্রায় এক-পঞ্চমাংশ (১৮ শতাংশ) অবিবাহিত কিশোরী মনে করে স্ত্রী কথা না শুনলে স্বামী তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের অধিকার রাখে। বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে তিন শতাংশ কিশোরীর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে অথবা স্বামীর থেকে আলাদা আছে অথবা বিধবা হয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি স্বচ্ছলদের মধ্যে

জরিপে অংশ নেয়া কিশোরীদের ১৭ শতাংশ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে বিবাহিত। ৩০ শতাংশ কিশোরীর স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য কমপক্ষে ১০ বছর। ৪৫ শতাংশের ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য ১০ এর বেশি। বয়সের পার্থক্য বেশি অর্থিকভাবে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

৯৭ শতাংশ কিশোরী পড়াশোনা করেছে

জরিপে একটি আশাবাদী তথ্যও উঠে এসেছে। কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ৯৭ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় (স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা) অংশগ্রহণ করেছে। দেশের ৯০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধাপ্রাপ্ত। বিবাহিত কিশোরীদের প্রায় অর্ধেক ও অবিবাহিত কিশোরীর প্রায় এক-চতুর্থাংশের নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে।

কিশোরদের ৫০ শতাংশ এবং বিবাহিত এবং অবিবাহিত কিশোরীদের ২০ শতাংশ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি পরিবারের একটিতে কমপক্ষে একজন কিশোর বা কিশোরী রয়েছে যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছর।

৭৬ থেকে ৮৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী খাদ্যের পাঁচটি গ্রুপ যেমন শাকসবজি, স্টার্চ জাতীয় খাবার, দুধ, প্রোটিন এবং ফ্যাটযুক্ত খাবারের মধ্যে চারটি গ্রুপেরও বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে যা শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী (৭০ থেকে ৮০ শতাংশ) আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে। তবে, এক চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করছে। জরিপ অনুসারে, প্রতি ১০ জন অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজন কৃশকায় বা কম ওজনের। আর অন্য ১০ ভাগের এক ভাগ বেশি ওজনের।

বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে

জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী এবং ৬৬ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন কিশোরী ঋতুকালীন সময়ে কমপক্ষে একদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ রাখে। তবে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যকর আচরণের প্রবণতা এখনও বেশ কম। বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ৯ শতাংশ এবং অবিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ১২ শতাংশ মাত্র।

জরিপ অনুযায়ী, ঋতুকালীন সময়ে কিশোরীদের মধ্যে এখনও স্বাস্থ্যকর প্যাড ব্যবহারের প্রবণতা কম। ৯৮ শতাংশ কিশোরী একাধিকবার ব্যবহৃত প্যাড সাবান-পানি নিয়ে পরিষ্কার করে ব্যবহার করে। অনেক সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার না করে পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করে৷

বক্তারা যা বললেন

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ আলী নূর, যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির পপুলেশন হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন অফিসের পরিচালক জার্সেস সিধওয়া। জার্সেস সিধওয়া বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা তাদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আরও তথ্য চায়। এখন আমাদের ভাবতে হবে এই কিশোর-কিশোরীদের আমরা কতটা কার্যকরীভাবে এইসব তথ্য দিতে পারি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি করলেও বাল্যবিয়ে, কৈশোরে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের হার এখনও বেশি।’ স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে বাল্যবিয়ে রোধ করা, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন মন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *