আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

Slider সারাবিশ্ব


মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিসহ দেশটির বেসামরিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। পাশাপাশি গ্রেফতার সকল বন্দীকে মুক্তি দিয়ে দেশটির সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেসামরিক প্রশাসনের সাথে সামরিক বাহিনীর কয়েক দিনের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী সোমবার এই অভ্যুত্থান করে।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর হাতে আইনসভা, নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা স্থানান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সেনা অভ্যুত্থানে উদ্বেগের কথা জানিয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন ‘সব নেতাকে অবশ্যই মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে, অর্থবহ সংলাপে চালাতে হবে, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে পুরোপুরি সম্মান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র, শান্তি, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জনগণের প্রতি জাতিসঙ্ঘের সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মহাসচিব।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের দেশটির রাজনৈতিক নেতা অং সান সুচিসহ বন্দী সব নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বার্মিজ সামরিক নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি সকল সরকারি কর্মকর্তা ও বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দেয়ার এবং বার্মার জনসাধারণের ইচ্ছাকে সম্মান করার যা ৮ নভেম্বরের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছে।’

সেনা অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মিয়নামারের পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ভারত অবিচলভাবে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরাইজ পেইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সরকার মিয়ানমারি সামরিক বাহিনীর আরো একবার মিয়ানমার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এবং স্টেট কাউন্সিলর ডাও অং সান সুচি ও প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্টের আটকে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে।’

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি আইনের শাসনকে সম্মানের, বৈধ পন্থায় মতোবিরোধ সমাধানের এবং সকল বেসামরিক নেতা ও অবৈধভাবে গ্রেফতার হওয়া সব বন্দীদের ছেড়ে দেয়ার।’

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে দেশটির সবপক্ষকে আত্মসংযমের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সমস্যা সমাধানে সবপক্ষকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জন সিফটন সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, ‘দশকের পর দশক মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা কখনোই প্রথম ধাপে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। সুতরাং, আজকের ঘটনা মূলত দেশটিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিবিম্ব।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি রিজিওনাল ডাইরেক্টর মিঙ ইউ হাহ সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অং সান সুকিসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *