সরকারি স্কুলে রেকর্ড আবেদন

Slider জাতীয়

রাজধানীর স্বনামধন্য একটি বেসরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল ফুয়াদ আল হাসান। তার বাবা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাবার চাকরির কারণে তারা চলে যান দিনাজপুরে। তাই ফুয়াদের প্রিয় স্কুলটি ছাড়তে হয়। নতুন বছরে, নতুন শহরে চাই নতুন স্কুল। তাই দিনাজপুর জিলা স্কুলে আবেদন করেছেন ভর্তির জন্য। ফুয়াদের বাবা রেজা আল হাসান বলেন, চাকরি শেষ তাই রাজধানী ছাড়লাম। ইচ্ছা ছিল চাকরি শেষে ব্যবসা করবো ঢাকাতেই।

কিন্তু করোনার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। আর দিনাজপুরে যেহেতু থাকবো আবার চাকরি শেষ তাই সরকারি স্কুলই প্রধান লক্ষ্য। ফুয়াদের মতো অনেক শিক্ষার্থী করোনার কারণে রাজধানী ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। নতুন বছরে ভর্তি হতে তাদের প্রধান লক্ষ্য সরকারি স্কুল। এর কারণ করোনার জন্য অভিভাবকদের অনেকে সংকটে পড়েছেন। আয় কমে গেছে। এ অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাড়তি খরচ সামাল দেয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় খরচ কমাতেই সরকারি স্কুলে সন্তান ভর্তির লক্ষ্য ঠিক করেছেন অনেক অভিভাবক। তাই এবার রেকর্ডসংখ্যক আবেদন পড়েছে। ধানমণ্ডির ১৫-এ ‘বার্গার ভাই’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল জিসান রায়ের। করোনার সময় দীর্ঘদিন রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকায় আর শুরু করতে পারেননি তিনি। ঝিগাতলায় থাকতেন দুই রুমের বাসা নিয়ে। দুই মেয়ে পড়তো বেসরকারি স্কুলে চতুর্থ ও প্রথম শ্রেণিতে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্ত্রী ও দুই মেয়েকে। নিজে ওঠেন একটি মেসে। আর কাজ শুরু করেন একটি রেস্তরাঁয় ম্যানেজার হিসেবে। জিসান রায় বলেন, চাকরি ছেড়ে ব্যবসা ধরেছিলাম। দুই বছর খুবই ভালো চলছিল। কিন্তু করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার দরুন সব শেষ হয়ে যায় আমার। এখন কোনোরকম চাকরির টাকা দিয়ে টিকে আছি।

তিনি আরো বলেন, মেয়ে দু’টিকে এবার গ্রামের বাড়িতে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো। কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করানোর মতো সক্ষমতা নেই।

আবার রাজধানীতে থেকেও অনেক অভিভাবক বেসরকারি স্কুল থেকে ঝুঁকছেন সরকারি স্কুলের দিকে। একটি কল সেন্টারে চাকরি করতেন আসমা আশা। তার স্বামী ব্যবসায়ী, যুক্ত আছেন পোশাক ব্যবসায়। তাদের ছেলে নিয়ন হাসান ও নয়ন হাসান পড়তো মিরপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে। করোনার ধাক্কায় চাকরি হারানো মা বলেন, আমার পরিবারের আয় প্রায় চার ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। আমার দুই ছেলে সপ্তম ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওদের পিছনে মাসে আমাদের প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হতো। এই মুহূর্তে এই ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই অপেক্ষায় আছি সরকারি স্কুলের।

এসব নানা কারণে এখন এবার সরকারি স্কুলে বাড়ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চাপ। আবার চলতি বছরে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণার কারণেও অনেকে সরকারি স্কুলে আবেদন করেছেন।

সরকারি স্কুলে রেকর্ড পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে বিপরীত দিকে বেসরকারি স্কুলে মিলছে না সাড়া। এই স্কুলগুলো আশাবাদী সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ যারা পাবে না তারা ভর্তি হবে বেসরকারিতে। কারণ সরকারি স্কুলে এতো পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই।

সরকারি স্কুলে ভর্তিতে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত। আর লটারি অনুষ্ঠিত হবে ১১ই জানুয়ারি। সেদিন সারা দেশে একযোগে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। আবেদনের সময় বৃদ্ধির প্রথম পাঁচ দিনে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ৫০ হাজার। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি স্কুলে শূন্য আসন রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার। এখন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ।

রাজধানীসহ জেলা শহরে স্বনামধন্য বেসরকারি স্কুলগুলোতে সংকট দেখা না দিলেও বেশিরভাগ স্কুল সংকটের আশঙ্কা করছে। লটারির পর অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। কিন্তু করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কায় অনেকেই হয়েছেন শহর ছাড়া। ফলে পূর্বের ন্যায় শিক্ষার্থী পাবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সারা দেশে আমাদের প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে এ বছর। তবে এই সংখ্যা কিছুটা বাড়বে লটারির পর। তবে পূর্বের অবস্থায় আর কখনোই ফিরবে না। অধিকাংশ অভিভাবক বলছেন, স্কুল বন্ধ এখন ভর্তি করিয়ে কী হবে। স্কুল খুললে এরপর ভর্তি করাবো শিক্ষার্থীদের।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, বেসরকারি স্কুলগুলোতে তাদের চাহিদামতো সরকারি স্কুলের ভর্তির লটারির পর শিক্ষার্থী পাবে। এখন অনেক অভিভাবক লটারির অপেক্ষায় রয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে আমরা স্বভাবতই একটি ধাক্কা খেয়েছি। এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম একটা সঠিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে গেলে করোনার এই ধাক্কা সামলে উঠা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *