গবেষকদের পূর্বাভাস জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি

Slider জাতীয়

এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামী জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং করেন এমন একটি বিশেষজ্ঞ দল এমন পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে আসছে জুন মাস পর্যন্ত ১৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। ওই সময় পর্যন্ত ৪৭.৮ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নিলে সংক্রমণ বেড়ে ৫০.৮ শতাংশও হতে পারে। ওই সময় গড়ে দিনে ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক এবং অক্সফোর্ড ও টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরামর্শক এই গবেষণা পরিচালনা করেন। গত মে মাস থেকে তারা নিয়মিতই করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করে আসছেন। সর্বশেষ ১৪ই ডিসেম্বর তারা গবেষণা তথ্য সরকারকে অবহিত করেন।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা পার্টনার হিসেবে করোনাভাইরাস মডেল তৈরিতে কাজ করেন। বিশেষজ্ঞ ওই দলটিতে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ও ড. শাফিউন শিমুল। কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মোফাখখার হোসেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত জেবিন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবুল জামিল ফয়সাল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশে শনাক্তের হার কম হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। একইভাবে ইতালি-যুক্তরাজ্যের চেয়ে মৃত্যুর হার কম হলেও ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি।

গবেষক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংক্রমণ বাড়লে চিকিৎসার জন্য বাড়তি ৮ হাজার শয্যা লাগতে পারে হাসপাতালে। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৪৭.৮ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। ওই সময় প্রতিদিন আক্রান্ত হতে পারেন ৮ হাজারের মতো মানুষ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা, অবকাঠামো, প্রতিদিনের পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও শীতকালীন পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই কমবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে তারা স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছেন।

বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা বলেছেন, দেশে নভেম্বর মাস থেকেই করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এখন সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে মৃত্যুর হারটা বেড়ে গেছে। এর কারণ হলো এক সময় পরীক্ষাগার কম ছিল। তখন মানুষের মধ্যে ভীতি ছিল। তাই তারা বিভিন্ন চাপে পরীক্ষা করাতো। অথচ এখন দেশে আগের চেয়ে পরীক্ষাগার বেড়েছে কিন্তু মানুষ পরীক্ষা করাচ্ছে না। টেস্ট হচ্ছে না অথচ মানুষ আক্রান্ত হয়ে সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সিরিয়াস অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। এতে করে দেশে মৃত্যুর হারটা বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষের পরীক্ষা প্রয়োজন। তবেই আসল পরিস্থিতি জানা যাবে। তারা বলছেন, মানুষ কেন টেস্ট করাচ্ছে না সেটি সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। কেনইবা মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে সে বিষয়টা খুঁজে নিতে হবে। এ ছাড়া শীতকালে আইসিইউ সাপোর্টের বেশি প্রয়োজন হয়। আইসিইউ না বাড়াতে পারলেও যেগুলো আছে সেগুলোকে কার্যকরী করা দরকার। এ ছাড়া মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন করে তোলা দরকার। কারণ মাস্ক ব্যবহারে ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম সীমিত করতে হবে। স্কুল-কলেজ জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে চলতি বছরের ৮ই মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৪০০ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানের প্রকৃত চিত্র আসছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআর,বি’র এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারিভাবে দেয়া তথ্যের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানীতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *