মাদক, অস্ত্র ও কোটি টাকাসহ গ্রেপ্তার মনির হোসেন ওরফে ‘গোল্ডেন মনিরের’ সহযোগীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। গণমাধ্যমে এসেছে গোল্ডেন মনির সরকারদলীয় একজন প্রতিমন্ত্রীকে গাড়ি দিয়েছেন এবং একাধিক এমপির সঙ্গে তার যোগসাজশ ছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যমে সে খবর বের হওয়ার পর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সেটার তদন্ত করছে। কোন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক, কোন কোন এমপির সঙ্গে তার যোগাযোগ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোল্ডেন মনিরের বাসায় দুইশ’র বেশি প্লটের কাগজ পাওয়া গেছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত, যারা তাকে হাতিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এখানে শুধু অপকর্মকারী যে প্রত্যক্ষভাবে করেছে তা নয়, তার মদতদাতা কে সেটাও দেখবে। দুইটাই তদন্ত হচ্ছে, দুইটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুইটাতেই যারা অপরাধী, অপকর্মকারী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার বহুল আলোচিত বেগমপাড়ার সাহেবদের ব্যাপারে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার বেগমপাড়ার বিষয়টি নজরে আনার পর থেকেই সক্রিয় হয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদককে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। দুদকের তদন্তে যাদের নাম বের হয়ে আসবে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেগমপাড়ায় যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের মধ্যে সরকারি আমলার সংখ্যা বেশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা অর্থপাচার করেছে, আমাদের কাছে তাদের পরিচয় অর্থপাচারকারী। তারা যেই হোক ধরা হবে। এর মধ্যে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি মনে করেন তিনি সরকারের কাছের লোক, তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। কারা বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত, সরকারের কাছে এমন কোনো তথ্য আছে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, তদন্ত শেষে পাচারকারীদের নামও প্রকাশ করা হবে। মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে এ মুহূর্তে মন্ত্রিসভা পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছে। তিনি একজন ভালো লোক। জামালপুরের ইসলামপুরের সংসদ সদস্য, তাকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। আর এ মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় কোনো পরিবর্তনের কথা আমি জানি না। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে ওটা (ধর্ম) যেহেতু খালি সে জন্য পূরণ করছে।
এ সময় আর পরিবর্তন তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে মনে হয় না। খুব সহসাই পরিবর্তন হচ্ছে না। তিনি বলেন, করোনাকালে মন্ত্রিপরিষদে কিছু বিষয় আছে। কাজের বিষয় আছে। ফিজিক্যাল প্রেজেন্ট দিয়ে কাজ করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী জরুরিভিত্তিক কোনো পরিবর্তন দরকার আছে বলে মনে করছেন না। করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষের জীবন আগে। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে। কাজেই সবদিক চিন্তা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, পুরো লকডাউন সম্ভব না, পাকিস্তান করতে পারেনি, ভারত যা করেছে তাতেও লাভ হয়নি। রোজ রোজ সংক্রমণ বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। তবে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা মাস্ক পরবে না জরিমানা হবে। এ বিষয়টি স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর।
সরকার কি ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সিদ্ধান্ত হতে পারে যদি কোনো রেস্ট্রিকশন দিতে হয় সেটিও হতে পারে। মফস্বলে তো একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মানে না। তবে এ রকম (লকডাউন) কিছু না। গতি-প্রকৃতি দেখে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সেটাই কঠোর সিদ্ধান্ত। কড়াকড়ি করা হবে। যেমন ফ্রি স্টাইলে মাস্ক না লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো। মানুষের এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।