হাসানুজ্জামান হাসান,ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ইউএনওকে গালাগালি করে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছেন বলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে অভিযোগটির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ভাগাভাগি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
সম্প্রতি এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায়। গত বৃহস্পতিবার মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকা তৈরি নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ পায়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনওকে গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।
অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে গালমন্দ করে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এই চেয়ারম্যান।
উপজেলা পরিষদের ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন তিনি।
বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় এবং প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান।
শুধু তাই নয়, তার কথামতো কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান।
এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক মার্ফতে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে গালমন্দ করেন।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, আমরা সকল দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও আমরা বিশ্বাস রাখি।
তবে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জনস্বার্থে গত অর্থ বছরের সকল দফতরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ায় অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইউএনও নিজেই বিধি বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারের নাম নিয়ে এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাটা মালিকদের চাপ দিয়ে ইট নিয়ে এসে উপজেলা পরিষদে রেখেছেন।
তিনি বলেন, তদারকি কর্মকর্তা হয়ে নিজে কাজ করার বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এসব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবকে (ডিডিএলজি) তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।