নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা -৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যা ব। এর আগে র্যা বের একটি দল হাজী সেলিমের বাসায় তল্লাশি চালায়।
আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছিলেন, হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিমসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের খুঁজছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গতকাল রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগান সিগন্যালের পাশে ‘সংসদ সদস্য’ স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। পরে জনরোষের মধ্যে গাড়িটি ফেলে এর নম্বরপ্লেট ভেঙে চলে যান হাজী সেলিমের ছেলে ও তার বডিগার্ডরা। গাড়ির নম্বর– ঢাকা মেট্টো- ঘ ১১-৫৭৩৬। ওই সময় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছিলেন, মারধর করা ব্যক্তি হাজী সেলিমের ছেলে ও তার বডিগার্ড। এ ঘটনায় রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মো. ওয়াসিফ আহমেদ খান।
পরে আজ সকালে হাজি সেলিমের ছেলেসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
এদিকে, ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওয়াসিফ আহমেদকে রক্তাক্ত দেখা যায়। ভিডিওতে দাবি করা হয়, মারধর করে তার দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এর আগে আজ ভোরে ভুক্তভোগী নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মোঃ ওয়াসিফ আহমেদ ধানমন্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় হাজী সেলিমের ছেলে এরফান সেলিম (৩৭), তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ (৩৫), হাজি সেলিমের মদীনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু (৪৫), গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ (৩০) অজ্ঞাতপরিচয়ের দু-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগান মোড়ে হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মোঃ ওয়াসিফ আহমেদকে মারধর করা হয়। ঘটনার পর পর গাড়িটি ফেলে এর নম্বরপ্লেট ভেঙ্গে চলে যান হাজী সেলিমের ছেলে ও তার বডিগার্ডরা।
রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও আজ ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এরফানের গাড়ি ওয়াসিফকে ধাক্কা মারার পর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসাথে বলতে থাকেন, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনি মেরে ফেলব’ বলে কিল-ঘুষি মারেন এবং আমার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
‘তারা আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। পরে আমার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডি থানার ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
মামলায় মোট পাঁচটি ফৌজদারি অপরাধের ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধগুলো হলো- দণ্ডবিধি ১৪৩ অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশের সদস্য হয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলকভাবে বল প্রয়োগ করা, ৩৪১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৩৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা, ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার ওপর বল প্রয়োগ করা এবং ৫০৬ ধারায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার।