নোয়াখালী: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গৃহবধূর খন্ডিত লাশ উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ১৫দিন পর এ হত্যায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে দু’জন আদালতের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। একইসাথে হত্যায় ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়।
গত ৭ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজ মারা গ্রামের প্রভিডা ফিডে পেছনের একটি ধানক্ষেতে গৃহবধূ নূর জাহান (৫৮) এর পাঁচ টুকরো লাশ পড়ে ছিল। পরে স্থানীয় এক নারী ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে এসে মরদেহটি দেখতে পায়। পরে তার ছেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করে।
মায়ের জমির লোভ এবং মৃত সৎভাইয়ের পাওনা মেটাতে নিহতের ছেলে হুমায়ুনসহ তার সাত সহযোগী মিলে নূর জাহানকে হত্যা করে খণ্ডিত টুকরোগুলো পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। নৃশংস এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে ভিকটিমের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা (২৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো আনোয়ার হোসেন পিপিএম ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরে এ হত্যার রহস্য উদঘাটনে নেতৃত্ব দেয়া জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবির হুমার বন্ধু নীরব (২৬) ও প্রতিবেশি কসাই নূর ইসলাম (৩৮) কে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়। পরে তারা দু’জন স্বেচ্ছায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী ও মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবিরকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়নের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন (২৬), মামাতো বোনের স্বামী সুমনকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, হুমায়ন কবিরের সৎভাই বেলাল গত দেড় বছর আগে ইটভাটায় মারা যান। মৃত্যুর আগে বেলালের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয় বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূরজাহানকে জিম্মাদার রেখে ৪ লাখ টাকা সুদে নেন। ওই টাকা পরিশোধ করার আগে মারা যান বেলাল। বেলালের মৃত্যু পর পাওনাদাররা ওই টাকার জন্য হুমায়ন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে। হুমায়ন চেয়েছিল মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিন্তু নুরজাহান বলে হুমায়নের জমি বিক্রি করে তার শোধ করতে। এনিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
এর মধ্যে তার মামা দুলাল মাঝির কাছ থেকে পাওয়া ৬২ হাজার ৫০০ টাকার জন্য প্রায় দুলালকে জোর করত নূর জাহান। এসব বিষয় নিয়ে তার দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আর এই ক্ষিপ্ততার জের ধরে হুমায়ন, কালাম, সুমন প্রতিবেশী ইসমাইল, হামিদসহ মোট সাতজন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূর জাহানকে তার বাড়িতে ঘুমের মধ্যে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে তারা লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বঁটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে ৫ খণ্ড করে জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামি ইসমাইল ও হামিদকে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।