এমসি কলেজে গণধর্ষণ : আরো দুইজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

Slider জাতীয়

সিলেট: সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে স্বামীকে বেঁধে তরুনী গৃহবধুকে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তারেক আহমদ ও মাহফুজুর রহমান মাছুমও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পাঁচদিনের রিমাণ্ড শেষে রোববার দুপুরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে তাদেরকে আদালতেক হাজির করেন শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশ। সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালতে তারেক ও মহানগর হাকিম-২ সাইফুর রহমানের আদালতে মাহফুজ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। দুই আসামির স্বীকারোক্তি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বলেন, তারা দু’জনই ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে। জবানবন্দি প্রদান শেষে তাদের কারগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৮ আসামিই নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করলেন।

এ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গত শুক্রবার ও শনিবার এই দুইদিনে ৬ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শুক্রবার আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম এবং শনিবার রনি, রাজন ও আইনুল আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস জোর করে খোলা রাখে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যারাতে এক তরুণী গৃহবধু তার স্বামীকে নিয়ে নিজস্ব কারে সিলেটের এমসি কলেজের মেইন গেইটের কাছে এসে নামেন। এসময় ছাত্রলীগের ৬ ক্যাডার তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে মারধরের পর স্বামীকে বেঁধে তরুণীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষকরা গাড়ি আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকা তাদের দিয়ে তা নিয়ে যেতে বলে ধর্ষিতা তরুনীর স্বামীকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাতেই এ ঘটনা জানাজানি হলে সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে শাহপরান থানায়। একই মামলায় অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামী করা হয়েছে। অভিযুক্ত সকলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী। পুলিশ অভিযুক্ত সকলকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

ধরা পড়েছে নিজু
এক কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনায় ছাত্রলীগ ক্যাডার রাকিবুল ইসলাম নিজুকে (২২) শনিবার রাত ৮টার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নিজু সম্প্রতি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে দাঁড়িয়াপাড়ার মেঘনা ১৪/বি ভাড়া বাসায় এনে ধর্ষণ করে। এঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে নিজুর বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দাখিল করলে মামলাটি শনিবারের তারিখে নথিভুক্ত করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নিজু দাঁড়িয়াপাড়ার মেঘনা ১৪/বি বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে।

সিলেটের মদন মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হলেও ইতোমধ্যে সে জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধ কর্মে। মারামারি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, হুমকিসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। প্রবাসীকে রক্তাক্ত করার দায়ে নিজু প্রায় ৬ মাস কারাবন্দিও ছিলেন।

জানা যায়, নিজু অপরাধ জগতে পা বাড়ায় প্রায় ৩ বছর পূর্বে। ওই বছরের ২ মে সওদাগর টুলা এলাকায় এক যুবককে নিজু ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রায় ৮-১০টি আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। একপর্যায়ে পুলিশের হেফাজত থেকে নিজু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় ভয়ে ওই যুবকের পরিবার থানায় কোন অভিযোগ দাখিল করেননি।

কোতোয়ালি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিজু যে গ্রুপের অনুসারি তার নেতা নানা অপরাধের সাথে জড়িত। আর সেই নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

ধর্ষকরা সিলেটের পবিত্র মাটিকে কলুষিত করছে : মেয়র আরিফ

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ধর্ষকরা দেশ ও জাতির শত্রু। ধর্ষকদের প্রতিহত করা দরকার। ধর্ষকরা সিলেটের পবিত্র মাটিকে কলুষিত করছে। সিলেটের পবিত্র মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আগামী ৯ অক্টোবর সিলেটের সকল পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠক থেকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে। ধর্ষকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমরা সবাই মিলে সুন্দর সিলেট শহর গড়বো।

তিনি রোববার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এমসি কলেজে গৃহবধুকে গণধর্ষণ করার প্রতিবাদে মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন সিলেট মহানগর শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন সিলেট মহানগরের সভাপতি ডা. জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মো. শাহজাহান আহমদ লিটনের পরিচালনায় প্রতিবাদি মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন সিলেট মহানগর-এর সিনিয়র সহ সভাপতি কানু লাল পাল, সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সাদেক প্রমুখ।

শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল
কলেজ ছাত্রাবাসসহ দেশব্যাপী নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির। সকাল ১১ টায় নগরীর বন্দরবাজারস্থ সুরমা পয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিতু মিয়ার পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি মামুন হোসাইন বলেন, শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্বামীকে আটকে করে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এর কয়েক দিন পর নগরের দাড়িয়াপাড়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে আরেক ছাত্রলীগ কর্মী। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ পূণ্যভূমি সিলেটকে ধাপে ধাপে ধর্ষণের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ষণসহ সব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। এসময় তিনি নারী ও শিশুর প্রতি ছাত্রলীগের চলমান পাশবিকতার বিরুদ্ধে সিলেটবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম, শাবিপ্রবি সভাপতি নজরুল ইসলাম, জেলা পূর্বের সভাপতি রুকন উদ্দিন, সেক্রেটারী মানসুর আহমদ, জেলা পশ্চিমের সভাপতি মিজানুর রহমান ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
সিলেট শহরতলীর রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে একজনকে সুনামগঞ্জের আক্তাপাড়া এলাকা থেকে ও অপরজনকে শহরতলির কালাপাহাড় এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে এসএমপির জালালাবাদ থানাপুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা জসিম উদ্দিন (২২) জালালাবাদ থানা এলাকার রায়েরগাঁয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে ও মো. এখলাছ মিয়া (২০) একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই ছাত্রীকে (১২) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ‘ধর্ষণ’ করে ওই দুই যুবক। ওইদিন রাতে স্কুলছাত্রীর পিতা জালালাবাদ থানায় দু’জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তিনি জানান, ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে আমার মেয়ে বাথরুমে যায়। ওই সময়ে বিদ্যুৎ ছিলো। একটু পরে বিদ্যুৎ চলে যায়। এই ফাঁকে সর্দারগাঁও এর এখলাছ আমার মেয়ের মুখে চেপে ধরে ও রায়েরগাঁও’র জসিম আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় বাছাই নদীর চরে। ওইখানে তারা দু’জন মিলে ধর্ষণ করে। এরপর তারা আমার মেয়েকে নৌকা করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতে নদীর পাড়ে যায়। সেখানে মেয়েটির মামা বিষয়টি দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। এসে দেখেন তাদের কাছে তার স্কুল পড়ুয়া ভাগ্নি। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্কুল ছাত্রীকে ফেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *