সুনামগঞ্জে বালি নিয়ে চলছে হরিলুট,রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে প্রশাসনের সঠিক নজরধারী না থাকার কারণে রাজস্ব বিহীন বালি নিয়ে চলছে হরিলুট। অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের কারণে কয়েক হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়েগেছে। অসহায় গ্রামবাসী বাঁধা দিয়েও তাদের বাড়িঘর রক্ষা করতে পারছেনা। নদী তীরবর্তী সরকারী ভূমি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা তৈরি করেছে বালি ও পাথর উত্তোলনের কোয়ারি নামক গভীর গর্ত। সেই সাথে নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে ওপেন বালি বিক্রি করছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ২০টি অবৈধ কোয়ারি। আর রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে নদীর তীর থেকে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি। এর ফলে লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর অন্যদিকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে প্রভাবশালীরা। কিন্তু এই অনিয়ম ও দূর্নীতি দেখার কেউ নাই।

এব্যাপারে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান,জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া জালরটেক হতে অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ির পশ্চিমপাড় পর্যন্ত প্রায় ২কিলোমিটার ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শিমুল বাগান হয়ে মানিগাঁও,মাহারাম,শান্তিপুর,চাঁনপুর পর্যন্ত আরো ২কিলোমিটারসহ কলাগাঁও,চাঁরাগাঁও এলাকায় চলছে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রির মহাতান্ডব। উপরের উল্লেখিত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত শতাধিক ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ১৫লক্ষ টাকা মূল্যের বালি অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি নৌকায় বোঝাই করা হয় ৭শত থেকে ১হাজার ফুট বালি। ইঞ্জিনের নৌকায় অবৈধভাবে বালি বোঝাই করার সময়-বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে,গাগটিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিন অবৈধ কোয়ারি থেকে উত্তোলিত প্রতিফুট বালি থেকে ১টাকা,কামড়াবন্দ গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া যাদুকাটা নদীর অবৈধ বালি থেকে প্রতিফুটে ১টাকা ও মানিগাঁও গ্রামের জালাল মিয়া প্রতিফুট বালি থেকে ১টাকা চাঁদা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে প্রতিফুট বালি থেকে ২টাকা চাঁদা নিচ্ছে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী। তার বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কখনোই পদক্ষেপ নেয় না বলে জানাগেছে। তবে উপরের উল্লেখিত ব্যক্তিদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আর অবৈধ বালি বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকাগুলো যাদুকাটা নদী হয়ে রক্তি,পাটলাই ও সুরমা নদীপথ দিয়ে জামালগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা,চাঁদপুর,কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি বোঝাই নৌকা আটক করলেও বালি খেকো এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কখনোই আইনগত পদক্ষেপ নেয় না। যার ফলে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন ও বিক্রি আজ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। চাঁদা উত্তোলনকারী সোর্সদের ব্যাপারে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের ইনর্চাজ এসআই মাহমুদুল বলেন,অবৈধ ভাবে বালি-পাথর বিক্রি কিংবা চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা এবং আমার ক্যাম্পের কোন সোর্স নাই,এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব।

তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন,রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধ ভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যুগযুগ ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পরও ক্ষান্ত হয়নি বালি খেকোরা। তাই অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শীগ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছেন নদী তীরবর্তী লক্ষলক্ষ অসহায় জনসাধারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *