করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতে সহায়তার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাস আগে দেয়া এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্ধারিত সময় পার হতে চললেও গত ৫ মাসে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৫ ভাগ। এমনি পরিস্থিতি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরো তিন মাস সময় বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্ধিত সময়ের মধ্যে ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জানা গেছে, করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিখাতে সহায়তার জন্য গত ১৩ এপ্রিল ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, এ তহবিল থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে এ খাতের কৃষক উদ্যোক্তাদের। কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে গঠিত এ তহবিল থেকে দেড় বছর মেয়াদে এ ঋণ দেয়া হবে। এর মধ্যে গ্রস পিরিয়ড থাকবে ৬ মাস। ওই সময় বলা হয়, শস্য ও ফসল খাতে চলমান ঋণপ্রবাহ পর্যাপ্ত থাকার দরুন এ খাত অপেক্ষা কৃষির চলতি মূলধনভিত্তিক খাতগুলোয় অধিকতর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এ খাতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে চলতি মূলধনভিত্তিক কৃষির অন্যান্য খাত যেমন, হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরিও প্রানিসম্পদ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষিখাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
এ কারেেণ আলোচ্য খাতগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে ব্যাংক এ শতাংশ হারে ঋণ নেবে। এ অর্থ আবার এ খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে বিতরণ করবে। এ খাত থেকে একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ খাত থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে হবে। ছয় মাসের গ্রস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১৮ মাস বা দেড় বছরের জন্য এ খাত থেকে ঋণ দেয়া হবে। ব্যাংক গ্রাহককে ঋণ প্রদান করবে এ খাত থেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা দেয়ার ৫ মাস পার হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আর মাত্র ১০ দিন সময় রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হতে চললেও ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংকই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করছে না। এমনি পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতে তহবিল সঙ্কটের কারণে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ৫ মাসে এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে মাত্র এক হাজার ২২৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের হার মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৫ ভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত হারে কৃষিঋণ বিতরণ করছে না। এমনি পরিস্থিতি ঋণ বিতরণের সময় বৃদ্ধি করে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আবারো নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনা বলা হয়েছে, কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচি সুস্থভাবে বাস্তবায়নের জন্য ঋণ বিতরণের সময়সীমা তিন মাস বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এ নির্দেশনা কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্ধিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর এডি লাইসেন্স সঙ্কুচিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।