সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Slider জাতীয়

ঢাকা: সারা দেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সমন্বয়ে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে টিমওয়ারী সাংগঠনিক সফরে নামার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে সম্মেলন না হওয়া সব স্তরে সম্মেলন করারও নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সভাপতিমণ্ডলীর রুদ্ধদ্বার সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতি-নির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হলো।

সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মতিন খসরু, আব্দুল মান্নান খান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে প্রয়াত দুই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের জমা দেয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো দ্রুত ঘোষণা করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা ঘোষণা করবেন। এছাড়া চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ তথা দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে দলীয়ভাবে করণীয় ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় বৈঠকে। সভায় উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন এবং করণীয় নির্ণয়ে পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ৫টি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি। বৈঠক প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সাংগঠনিক সফরের উপরের জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি দলের কমিটিগুলোতে ত্যাগী ও দলের প্রতি একনিষ্ঠদের স্থান দিতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন: করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই অবস্থা মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি কারণ আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা। এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যদি অন্য দলগুলো দেখি যারা হয়তো শুধু লিপ সার্ভিস অর্থাৎ ওই মুখে মুখে কথা বলেছে কিন্তু প্রকৃত মানুষের কাছে যেয়ে মানুষকে সাহায্য করা, সেটা কিন্তু আমরা অন্য দল বা অন্য সংস্থা; তাদের উপস্থিতিটা ওভাবে দেখিনি, এনজিও-টেনজিও অনেকেই আছে। কিন্তু তাদেরকে আমরা ওভাবে দেখি নাই। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন পরে আমাদের এই সভা। করোনাভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ বলে না, বিশ্বব্যাপী এই অবস্থার সৃষ্টি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই করোনাকে মোকাবিলা করে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর আমাদের বাংলাদেশের এমনি একটা অবস্থা, আমাদের তো শুধুমাত্র করোনার জন্য সর্বনাশ হচ্ছে সেটা তো না- সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা বলবো যে, অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে সেগুলো মোকাবিলা করতে পেরেছি। আশঙ্কা ছিল যে বিশাল একটা বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্যা দেখা দিতে পারে। এখনও পানি আছে কিছু কিছু নদীতে। কিছু ভাঙনও হচ্ছে। এবার নদীভাঙনটা ব্যাপক হয়েছে। নদীভাঙনে কিছু কিছু এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ একেবারে ঘরবাড়িহারা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সেই সঙ্গে আমি প্রশংসা করি, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটা মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছি। বাজেটের ডেফিসিটি এবার আমরা ৬ শতাংশ ধরেছিলাম। এখানে আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হলে ১০ শতাংশ ধরবো। কিন্তু সেটা আমাদের লাগেনি। কাজেই তার মধ্যে রেখেই আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাটাকে সচল রাখতে পেরেছি। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যার একটা ইকোনমিক পলিসি আছে, সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাই। ফলে আমরা যে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি খুব হিসাব করে। তিনি বলেন, আমাদের নদীগুলোর ভাঙন হচ্ছে, নদীগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের এটাই লক্ষ্য, আমাদের যতগুলো বড় নদী এবং যা আছে, আমরা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বজায় রেখে এই ব-দ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা এবং আমাদের দেশের মানুষকে কীভাবে সুন্দরভাবে একটা জীবন দেয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করা সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি জমা দেয়ার র্নিদেশ: এদিকে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদকগণ যারা এখনো উপকমিটি জমা দেয়নি তাদেরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি জমা দিতে হবে। সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে ৮ টি বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যগণ এসব কমিটি গঠনে দায়িত্বে থাকবেন এবং বিভিন্ন বিভাগীয় কমিটিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণও থাকবেন। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যন্ত দলকে পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে যে সকল জেলা ও মহানগর সম্মেলন হয়নি তাদের কমিটি গঠন করতে হবে তবে তার আগে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শেষ করতে হবে। ইতিপূর্বে যে সকল উপজেলা, জেলা, মহানগর এবং সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে তাদের সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কমিটি গঠন করে জমা দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই জমা দেননি, যারা এখনো জমা দেননি তাদের আগামী সাতদিনের মধ্যে চূড়ান্ত কমিটি জমা দিতেই হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলার কমিটি করে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের উপকমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের এবং দুঃসময়ে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মূল্যায়ন করতে হবে, কমিটি করার সময় কোনোভাবেই স্বজনপ্রীতি দেখানো যাবে না। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ৬১টি ইউনিয়ন, ৩ টি জেলা পরিষদ এবং ৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী তাদের এ মাসের ২০শে সেপ্টেম্বেেরর মধ্যে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় হতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ এবং জমা দিতে হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারেরও আহ্বান জানান। আগামী ২৮শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী পালনের লক্ষ্যে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলাদ মাহফিল, দোয়া এবং সীমিত আকারে সর্বপর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দিবসটি পালনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। দেশের মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজনের অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *