সেই চেহারায় গণপরিবহন

Slider জাতীয়

ঢাকা: ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাবেন হারুন অর রশিদ। ৩৮০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছিলেন বাসের। এই ভাড়া করোনা পূর্বের ভাড়া। তার কাছে রাখা হয়নি বর্ধিত ভাড়া। হারুনের মতো একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বর্ধিত ভাড়া রাখা হয়নি তাদের কাছে। তবে ভাড়া পূর্বের অবস্থায় গেলেও বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির। গতকাল মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহনে রাখা হচ্ছে পূর্বের ভাড়া। বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়া কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

ভাড়া নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে দেখা মেলে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে। ভাড়া আগের পর্যায়ে গেলেও উধাও করোনার ভয়, নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট এলাকায় সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগের ভাড়া রাখা হচ্ছে বাসে। কাওরানবাজার থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে এম এম লাভলী পরিবহনে দেখা যায় দুই সিটেই লোক নেয়া হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ নেই যাত্রীদের মধ্যে। তবে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়েও যাত্রী নিয়েছেন তারা। এই বাসে লোক ওঠানামাসহ ২৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৮ জন সব সময় মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। ১২ জন বাসে উঠে মাস্ক খুলে ফেলেন আর বাকি ৫ জনের মুখে মাস্ক ছিলই না।

একাধিক বাসে দেখা যায়, কোনো বাসেই ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। যাত্রাবাড়ী থেকে ফার্মগেটগামী যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, আগে প্রতিদিন ৪০ টাকা ভাড়া দিতাম এখন দিলাম ২০ টাকা। একাধিক ব্যক্তি পূর্বের ভাড়ায় গণপরিবহন যাওয়াকে সাধুবাদ জানান।

সড়কে বাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে দুই সিটে আসন ফাঁকা থাকলেও এখন দুই সিটে যাত্রী নিয়েও বাস ভর্তি। এমনকি ধীরে ধীরে যানবাহন বাড়ায় ব্যস্ততা বাড়ছে ট্রাফিক পুলিশদেরও। যাত্রাবাড়ীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, গণপরিহবন বেশি বলেই মনে হচ্ছে।
নিয়ামত ইসলাম রীতিমতো বাস কন্ডাক্টরের কথা অমান্য করেই গাড়িতে উঠলেন। মাস্কও ছিল না তার মুখে। প্রশ্নের জবাবে বলেন, সচেতনতো আমাদের থাকতেই হবে। তবে অনেক সময় সময়স্বল্পতায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়না। আরেক যাত্রী ইয়াসমিন বেগম বলেন, নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিজের ওপর। নিজেকেই সচেতন থাকতে হচ্ছে। বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যবিধি তো মানতেই হবে।
স্বাভাবিক ভাড়ায় ফিরেছে লেগুনাও। ফার্মগেট থেকে মোহাম্মপুরগামী লেগুনার আগের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। মঙ্গলবার রাখা হয় অর্ধেক। আগে ৭ জন যাত্রী নেয়া হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ১৪ জন।

সায়েদাবাদের হানিফ এন্টাপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার সোহাগ হোসেন বলেন, আমাদের যাত্রী তুলনামূলক কিছুটা কম। বলতে গেলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম। আশা করছি ধীরে ধীরে যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
তুরাগ পরিবহনের চালক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আগের ভাড়াই নিচ্ছি। কিছু যাত্রী সেই ভাড়াও দিতে চায় না। যে কারণে কারো সঙ্গে তর্ক-বিতর্কও হয়। এ ছাড়া সিটের বাইরে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। তারা জরিমানা করছে।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যাত্রাবাড়ী জোন থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পারে, তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত ভাড়া নিলে আমরা তা দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের অবহিত করবো। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করবেন। তবে এখন পর্যন্ত পর্যন্ত কোনো অভিযোগ মেলেনি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব মালিককে চিঠি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কোনো বাসে দাঁড়িয়ে বা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যদি কেউ এমন করে থাকে বা কোনো যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১শে মে সরকার আন্তঃজেলা বাস পরিষেবাসহ সব বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচলের শর্ত হিসেবে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *