স্বাস্থ্যবান গাজীপুর-২১: কামারের দোকানে কোরআন পড়া! হাইকোর্টে তালিকা দিতে হবে কাল

Slider জাতীয় টপ নিউজ

গাজীপুর: কথায় বলে কামারের দোকানে কোরআন পড়ে লাভ নেই। কথাই শুধু নয়। এটা প্রবাদও বটে। তবে লাভ নেই, সেটা একেবারে সঠিক নয়। কারণ লাভ হচ্ছেও। কামার যদি মুসলমান হয় তবে কোরআনের সূর শুনে একটু হলেও ধর্মের প্রতি আগে থেকে দুর্বলতা বাড়বে। আর যদি কামার অন্য ধর্মের লোক হয়, তবে কোরআন তেলাওয়াত শুনে ইসলাম ধর্মে চলেও আসতে পারেন। ইতোমধ্যে বিশ্বে অনেক অন্য ধর্মের লোক কোরআন তেলাওয়াত শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন।

গাজীপুর স্বাস্থ্যবিভাগে দীর্ঘ সময়ের অনিয়ম ও দূর্নীতি এক পলকে শেষ করা যাবে না। দীর্ঘ সময় পর এই ধারাবাহিক প্রতিবেদন একটু হলেও রাষ্ট্র ও মানুষের কল্যানে এসেছে তা পরিস্কার। কারণ ইতোমধ্যে শুনো গেলো দালাল চক্রের হাত থেকে অনেক টাকা বেঁচে গেছে হাসপাতাল মালিকদের। প্রতারক চক্রের কবল থেকে রক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জন এখন আর অন্য মাধ্যমে নয়, সরাসরি কথা বলছেন উপকার প্রার্থীদের সাথে। একই বাতাস লেগে গেছে, হাসপাতালের লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে ১২টি দপ্তরেও। জানা গেলো, সকল দপ্তরে এখন উপকার প্রার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলা হচ্ছে। আগেরমত আর মাধ্যম লাগছে না। প্রশাসনও বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে জরিমানা এমনকি হাসপাতাল বন্ধ পর্যন্ত করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে ভালো সংবাদ।

এদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতেও সচ্ছতার অনেকটা আলামত পাওয়া যাচ্ছে। সেবার মান বৃদ্ধি সহ চিকিৎসার নানা দিক সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানী না হয় সেদিকে বিশেষ নজরও আছে কর্তৃপক্ষের। এটাও ভালো খবর বটে। কিন্তু প্রতারক ও জালিয়ত চক্রের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এটা প্রশাসনের দূর্বলতা। এ ছাড়া ভুল বা বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া রোগীদের বিষয়ে প্রশাসনের কি পদক্ষেপ, সেটাও জানা যায়নি। নিউজে আসলেও প্রশাসন আবিস্কার করতে পারেনি সিন্ডিকেট। নিতে পারেনি ব্যবস্থাও। তাই পুরাতন বোতলে ঘি রাখতে হচ্ছে মনে হয়। এটা মন্দ খবর।

তবে আরো মন্দ খবর হল, ২৩ আগষ্ট লাইসেন্স করা বা নবায়নের নির্ধারিত সময় চলে যাওয়ার ৮দিন পরও লাইসেন্সপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করতে না পারায় উচ্চ আদালত জানতে চেয়েছে কয়টি হাসপাতাল আছে দেশে।

এই সংক্রান্ত খবর হল,

কয়টি হাসপাতালের লাইসেন্স আছে জানতে চান হাইকোর্ট

দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে কয়টি কোভিড ও নন-কোভিড হিসেবে আছে- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া কয়টি বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স আছে বা নেই এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন আবেদন কতগুলো রাষ্ট্রপক্ষের কাছে রয়েছে- তাও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত। আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে তা জানাতে বলা হয়েছে। ওইদিনই পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।

এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে সোমবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক-উল-হাকিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত সাংবাদিকদের জানান, দেশে বর্তমানে কতগুলো হাসপাতাল কোভিড এবং নন-কোভিড হিসেবে আছে, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কয়টির লাইসেন্স আছে এবং কয়টির নেই, স্বাস্থ্য খাত সংক্রান্ত যদি কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটে এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে পারবে কি না- এ বিষয়গুলো রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। ২ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন এ তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে গত ২৬ জুলাই দেশের সব বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম রিটটি দাখিল করেন।

এর আগে গত ২৯ জুলাই রিটের শুনানিতে আইনজীবী ইশরাত হাসান আদালতকে বলেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশের। মোট বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৪৪টি, এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ৫ হাজার হাসপাতালের। কিন্তু কোন ৫ হাজার হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে নেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা সংক্রান্ত আইনে লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা আছে। অথচ এরপরও লাইসেন্স ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল চলছে।

রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান আদালতকে বলেন, আমরা রিট পিটিশনের মাধ্যমে বৈধ বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা চাচ্ছি। এ তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করলে আমরা বৈধ হাসপাতাল সম্পর্কে জানতে পারব।

ওইদিন রিটকারী আইনজীবীকে আদালত প্রশ্ন করে বলেন, বারডেম, আইসিডিডিআরবি,র মতো বেশকিছু বড় হাসপাতালেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। তাহলে এসব হাসপাতাল কীভাবে চলবে?

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেছিলেন, এজন্যই রিটে আমরা বৈধ বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা চেয়েছি। এরপর আদালত মামলার শুনানির জন্য ৯ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে গত ১৯ জুলাই এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠান। সে নোটিশের জবাব না পেয়ে গত ২৬ জুলাই বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালে ভুয়া করোনা টেস্টের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ, তাদের কাছ থেকে টেস্টের নামে নেয়া টাকা ফেরত এবং প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে অন্তর্বর্তীকালীন ২৫ হাজার টাকা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করা হয়। রিটে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় বন্ধে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

পাশাপাশি রিট আবেদনে দেশের সব বৈধ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা প্রকাশ এবং প্রতিটি থানায় স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রিটে বিবাদী করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *