এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে মেজর সিনহাকে গুলি

Slider জাতীয়


কক্সবাজার (দক্ষিণ): অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করার ঘটনা এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই ঘটে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কি এমন ঘটেছিল, কেন গুলি করা হলো-সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র‌্যাব। এ কারণেই ওসি প্রদীপসহ ঘটনার তিন আসামিদের নিয়ে পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র‌্যাবের তদন্তদল। শুক্রবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় ঘটনাস্থল তল্লাশী চৌকির সামনে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের মত করে হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে।

শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে রিমাণ্ডে থাকা মূল ৩ আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উদেশ্যে বের হন র‌্যাবের একটি বহর। সিনহা হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামিকে গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে ৭দিনের রিমাণ্ডে র‌্যাবের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ৩ আসামির শুক্রবার রিমাণ্ডের চতুর্থ দিন।

গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ। এঘটনায় অভিযুক্ত ও রিমাণ্ডে থাকা ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে পৃথকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দুপুর ১টার দিকে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্ণেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযুক্ত আসামীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তরা নিজেদের মত করে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।

এসময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্ণেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ার ছাড়াও র‌্যাবের আইন ও মিডিয়া উইং প্রধান লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ এবং সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামসহ র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছি, কেন এই ফায়ারিংটা সংগঠিত হয়েছিল? এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কি এমন ঘটেছিল, সিনহা গুলিবিদ্ধ হয়েছিল? কিংবা লিয়াকত যেটা বলছে, পিস্তল তাক করে ফেলেছিল- এক মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কি এমন হয়েছিল, পিস্তল তাক করার মত পরিস্থিতি আসলেই হয়েছিল কিনা আর সেই বা কেন ফায়ার করল? আমাদের অনেক তথ্য উপাত্ত সংগৃহিত হয়েছে। সেটার আলোকেই আইও নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যাতে কোনভাবেই কোন নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পায় এবং কোন দোষী ব্যক্তি যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আসামীদের তাদের কাছ থেকে ঘটনার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন। রিমাণ্ডে থাকা বরখাস্তকৃত টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত হওয়া এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন র‌্যাবকে। দুপুরে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ঘটনার সাক্ষ্য গ্রহণ। হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামী পৃথক পৃথকভাবে র‌্যাবকে ঘটনা কিভাবে ঘটেছিল তা বর্ণনা করেন।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহা পরিচালক কর্ণেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, এমন কি ঘটনা ঘটেছিল সিনহাকে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে গুলি করা হল; এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামীকে মেরিন ড্রাইভের ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। ঘটনাস্থলেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি হুবহু উপস্থাপন করে দেখানোর মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নানাভাবে বিশ্লেষণ করে ঘটনার যাচাই করছেন, নির্দোষ কেউ যাতে জড়িত না হয়, আর কোন দোষি ব্যক্তি যাতে ছাড় না পায় সব বিবেচনাই রয়েছে। কোন সত্য যাতে গোপন না থাকে। সেজন্য প্রতি সেকেন্ডকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘রিমাণ্ডে থাকা আসামী, স্বাক্ষী ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে তদন্ত অনেক এগিয়েছে। এটি তদন্তের স্বার্থে এখন বলা মামলার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর ৫ আগস্ট তার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দলাল রক্ষিত, সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়াসহ ৯জনকে আসামী করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

পরে মামলা টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়। এই মামলায় এজাহারভুক্ত নয় আসামীর মধ্যে সাত জন গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়াও পরে আসামীভুক্ত বাহারছড়ার স্থানীয় তিনজন ও এপিবিএন এর তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *