রিজেন্টের মালিকের সাথে অন্ত:রঙ্গ ছবি, প্রভাবশালী অনেকেই বিব্রত

Slider জাতীয়

ঢাকা: সরকারের হাইকমান্ডের অনেকেই বিব্রত। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের সাথে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ছবিতে অনেকেই নানান বিরূপ মন্তব্য করছেন। ছবিতে বিশিষ্ট ওই লোকদের সাহেদের সাথে বেশ অন্তরঙ্গই দেখা গেছে। অথচ অনেক আগে থেকেই এই সাহেদের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণার অভিযোগ। গত ৯ বছরেই রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অন্তত ৩২টি মামলা হয়েছে। এমন অভিযোগের পরেও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো বাছবিচার ছাড়াই কিভাবে সাহেদের সাথে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে ছবি তুললেন তা নিয়েই মানুষের যত প্রশ্ন।

এসএসসি পাস ব্যক্তি সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। শুধু হাসপাতালই নয়; এমএলএম কোম্পানি, পত্রিকাসহ আরো কত কিছুর মালিক এই সাহেদ! উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তির সাথেই তার ছিল দহরমমহরম। প্রতারণাকাজে তিনি এই সম্পর্ককেই ব্যবহার করে আসছিলেন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস কিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দু’টি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ পর্যন্ত তার নামে ৩২টি মামলা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন থানায়। তারমধ্যে ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ ও আদাবরে মামলার সংখ্যা বেশি। মামলাগুলো হচ্ছেÑ বাড্ডা থানায়-৩৭(৭)০৯, আদাবর-১৪(৭)০৯, লালবাগ-৪৭(৫)০৯, উত্তরা ২০(৭)০৯, উত্তরা ১৬(৭)০৯, উত্তরা ৫৬(৫)০৯, উত্তরা ১৫(৭)০৯, ৩০(৭)০৯, ২৫(৯)০৯, ৪৯(০৯)০৯, ১০(৮)০৯; সবগুলোই প্রতারণার বলে জানা গেছে। প্রতারণার এসব টাকা রিজেন্ট কেসিএস লি. ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় অ্যাকাউন্ট নং-০৮৩২১০১০০০০১০০০৩, রিজেন্ট হাসপাতাল লি. ইউসিবি ব্যাংক উত্তরা শাখায় অ্যাকাউন্ট নং-০৮৩১১০১০০০০০০৬১৬, ব্র্যাক ব্যাংক উত্তরাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে তথ্য আছে।

সংশ্লিøষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারণার টাকা দিয়েই তিনি ব্যবসা প্রসারিত করেন। গড়ে তোলেন আরো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এমনকি পত্রিকারো মালিকও হন। তিনি কিছু সাংবাদিকও নিয়োগ দেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক হিসেবে তিনি পরিচয় দিতেন। নিজেকে আরো শক্তিশালী করতেই তিনি এই পত্রিকার মালিক হয়েছিলেন। কিন্তু সেই পত্রিকা আর বাজারে আসেনি। সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও চালাতেন তিনি। বিভিন্ন টকশোতে অংশ নিতেন। নামীদামি টেলিভিশনেও তিনি গেস্ট হিসেবে উপস্থিত হয়ে জাতিকে নসিহত করতেন।

র্যাব সূত্র জানায়, করোনাকালে ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র চার হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। বাকি পাঁচ হাজার ৭৩৬টি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট প্রদান করা হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি অনুযায়ী, বিানামূল্যে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু ১০ হাজার টেস্টের বিপরীতে রিজেন্ট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি রোগীপ্রতি এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ বিল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার শুধু জুন মাসেই সরকারের কাছে চিকিৎসা বিল বাবদ পাঠানো হয় এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার হিসাব। সেবার নামে এভাবেই অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করেছে রিজেন্ট। আর যখনই এসব নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তদন্ত শুরু করে, তখন নিজেকে বাঁচাতে সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের একটি নাটক করেন।

এ দিকে, সাহেদের এই প্রতারণার চিত্র জনসমক্ষে এলে বিব্রত অবস্থায় পড়েন প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-এক্টিভ করার আগেই সাহেদের ওয়াল থেকে অনেকেই ওই সব ছবি নিয়ে ভাইরাল করেন। অনেককেই দেখা গেছে, সাহেদের সাথে বেশ অন্তরঙ্গ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারণার কাজে সাহেদ এই ছবিগুলো ব্যবহার করতেন। এমনকি অনেক মানুষকে নানা সময় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *