একটা ভাতা কার্ডের জন্য কত ঘুরছি, তবুও পাই নাই

Slider জাতীয় লাইফস্টাইল

সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ “কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়েই দিনপার করছি। কিন্তু, আমার খোঁজ রাখেন না কেউ ”। টিনের ছোট ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে দুই ছেলের সাথে বসবাস করছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা। বৈশ্বিক মহামারী করোনার দিনগুলো যেন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য। আর কর্মক্ষম ছেলে কাজের অভাবে বাড়ীতে বসে আছে। কিন্তু ঘরে চাল, ডাল কিছু নাই আশেপাশের মাইনষ্যের দেওয়া খাবার অল্প কইরা খাইয়্যা দিন নিতাছি।আর গোলাপি রঙয়ের শাড়ীর পরিষ্কার আচঁলে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্ল্যা পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা জমিলা বেগম।

এদিকে আট সদেস্যর পরিবারের বোঝা কমাতে খুব ছোট বেলায় বিয়ে দিয়ে জমিলাকে বিদায় করে দিয়েছিলেন তার বাবা। এতে সংসার পাতেন একই ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিনের সাথে। আর পরিবহণ শ্রমিক স্বামীর সংসারে ছয় সন্তানের জননী হন তিনি। এতে সাচ্ছন্দ্যেই চলছিল তার সংসার৷

কিন্তু অতীতের সেই সোনালী দিনের কথা বলতে গিয়ে তার মুখে ফোটে এক চিলতে হাসি। তবে সুখের সেই স্মৃতি মন করে মাঝে মাঝেই তিনি হারিয়ে যান ভাবনার রাজ্যে। কারণ বিধাতা তার কপালে সেই সুখ বেশি দিন রাখেননি। এতে বৃদ্ধার হাসি মুখটা মুহুর্তেই মলিন হয়ে যায়।

আবার খানিক সময় নিরব থেকে আবার বলতে শুরু করলেন তিনি, “জন্ডিস হইছিল ওর বাপের, তখন তো টাকাও তেমন ছিলন না। এতে মির্জাপুরে ডাক্তার দেখাইছি। কিন্তু একদিন হঠাৎ বেশি অসুস্থ হইয়া গেল,নিয়া গেলাম সদর হাসপাতালে। এতে ডাক্তার কইলো অবস্থা ভালো না, এখানে থাকার চাইতে বাড়িতে নিয়া যান। আর বাড়ীতে আনার পর মরে গেল।”

আবার, হাঠাৎ কোনো হাঁক ঢাক ছাড়া যেমন আকাশ গর্জে ওঠে বৃষ্টি নামে ঠিক তেমনি শুরু হয়ে গেল তার কান্না। তার গালে বেয়ে পানি ঝড়ছে। খানিক সময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে থাকলেন যে, ” আস্তে আস্তে ছেলে মেয়েরা বড় হয়। আমি মেয়েদের বিয়ে দিয়ে বিদায় করি আর ছেলেরা কাজ করে। কিন্তু স্বামীর চার শতাংশ জমিতে সরকারের নজর পড়ে হাসপাতালের জন্য নিয়া গেল সেই একমাত্র সম্বল বাড়ী ভিটা।( বর্তমান সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ) বিনিময়ে মাত্র ১ লাখ টাকা দিছিলো সরকার থ্যাইকা। আর মেজো ছেলে কাঠের ব্যবসা করবো বইল্যা টাকা নিল। কিন্তু ব্যবসায় কিছু করতে পারেনি। এমনকি বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায় সেই ছেলে। ছোট ছেলেও বিয়ে করে পাড়ি জমায় বিদেশে।”

এদিকে বড় ছেলে আর দ্বিতীয় ছেলে নিয়ে জায়গায় হয় বাবার বাড়িতে। আর তখন থেকে বাড়ীর মাঝে টিন,কাঠ আর বাঁশ দিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন।। কিন্তু ঘরের বাঁশগুলো পুরাতন হয়ে গেছে। ফলে বাঁশের খুটির উপর ভর ঠিকে আছে পুরো ঘর। এতে ঝড় বৃষ্টির দিন আসলেই শুরু হয় তার দুশ্চিন্তা। কখন আবার বিনা নোটিশে ভেঙে যায় তার আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা টুকুও৷ এতো গেল প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভয়। কিন্তু নিজের জমি নেই তাই আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের জমিতে সেই ভাইও মাঝে মাঝেই আসেন ঘর উচ্ছেদ করতে। আবার সম্প্রতি তিনি জমিলার রান্নার জায়গা কেড়ে নিয়ে বেড়া দিয়েছে।

এদিকে তিন জনের ছোট সংসার জমিলা বেগমের। তার বড় ছেলে আক্তার হোসেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে স্থানীয় পরিবহণ হতে টাকা তুলে শ্রমিক ইউনিয়নে জমা দিয়ে দিনে আয় করেন ২৫০ টাকা। আর এ কাজটাও একদিন পর পর করতে পায় সে৷ ফলে প্রতিদিন বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে যা পান তা দিয়েই চলে সংসার। তার আরেক ছেলে ইমরান হোসন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।

সরকারি কোন সাহায্য পান কি ? জানতে চাইলে তিনি বলেছেন,”মেম্বার, চেয়ারম্যানের কাছে কতবার গেছি তার হিসাব নাই। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা শেষমেশ ১০ টাকার চাউলের কার্ডের জন্য এমন কোনো মানুষ নাই তার কাছে যাই নাই। এমনকি মহিলা মেম্বারের কাছে কয়েকবার গেছিলাম। চার ছেলে আছে জেনে কেউ আমারে একটা কার্ড করে দিল না !”

জামুর্কী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম পিয়ারা জানিয়েছেন,”আমার কাছে নতুন কার্ড আসলেই তাকে একটা ব্যবস্থা করে দিব। আর তার কাগজ জমা নিয়েছি।”

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, “যদি কেউ এখনো ত্রাণ না পেয়ে থাকে তবে আমরা শীগ্রই ত্রাণ পৌঁছে দিব। এমনকি সে যদি ভিজিএফ ও ১০ টাকার চাল পাবার যোগ্য হয় তবে অবশ্যই তার ব্যবস্থা করব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *