করোনায় আক্রান্তদের শরীরে উপসর্গ না থাকা ভয়ঙ্কর ভীতি

Slider জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ


ঢাকা: করোনা আক্রান্তদের অনেকের শরীরে লক্ষণ অথবা উপসর্গ কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আবার চারবার পিসিআর টেস্ট করেও নেগেটিভ হচ্ছে, শরীরে সুস্পষ্ট লক্ষণ
থাকার পরও। ভাইরাসটির এ অদ্ভুত আচরণ আরো বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও অনেকের দেহে লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় তারা দৃশ্যত নিজেকে সুস্থ মনে করেন। ফলে বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলাফেরা করছেন এবং অসংখ্য মানুষকে নিজের অজান্তেই সংক্রমিত করে যাচ্ছেন।

রাজধানীর মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের নিউনেটোলজির এক চিকিৎসক বেশ কয়েকদিন করোনার উপসর্গ নিয়ে চলছিলেন। কিন্তু পিসিআর পরীক্ষায় তার দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তার বন্ধু চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, তিনি ২০ এপ্রিল প্রথম করোনা পরীক্ষা করান মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিন্তু তাতে নেগেটিভ আসে। পরে আবারো ২৫ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তিনি আরেকটি টেস্ট করান তাতেও নেগেটিভ আসে। তিনি গতকাল ৩ মে পর্যন্ত তিনটি পিসিআর টেস্ট করালে শেষ পর্যন্ত গতকাল তার রিপোর্ট পজিটিভ হয়। এর আগে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন উচ্চ তাপমাত্রা ও করোনার অন্য লক্ষণ নিয়ে। রিপোর্ট পজিটিভ হলে গতকাল রোববার তাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ঢাকার একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্রের এক সাংবাদিকও কয়েকদিন ধরে করোনার লক্ষণ নিয়ে বাসায় ছিলেন। তেমন কোনো সমস্যা তিনি অনুভব করেননি। পরে গতকাল রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে বাসা থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে সেখানে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, এটি নতুন ধরনের ভাইরাস।

এটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি। ফলে এর সব বৈশিষ্ট্য এখনো অজানা রয়ে গেছে। এ কারণে সবাইকেই সাবধান থাকতে হবে। স্বাস্থ্য পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, আক্রান্ত কারো দেহে কোনো লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। আবার এক মাস পর প্রকাশ পেতে পারে। তখন হয়তো তার চিকিৎসা লাগতে পারে। আবার চিকিৎসা নাও লাগতে পারে, এর মধ্যেই দেহে অ্যান্টিবডি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) তৈরি হয়ে এমনিতেই তার দেহ থেকে ভাইরাস চলে যেতে পারে। সব ব্যাপারেই সাবধান থাকতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মোজাহেরুল হক এ ব্যাপারে বলেন, লক্ষণ প্রকাশ না করেই একজন সুস্থ হয়ে যেতে পারেন করোনা থেকে। এক সময় তার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেই ভাইরাসটি আর থাকবে না। ফলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন, এটি তার জন্য ভালো কোনো জটিলতা ছাড়াই তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। কিন্তু অন্যের জন্য তিনি হয়ে উঠবেন বিপজ্জনক। নিজের অজান্তেই অসংখ্য ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত করে যেতে পারেন। সেজন্য প্রয়োজন বেশি হারে টেস্ট বাড়ানো। এক দিনে কমপক্ষে ২০ হাজার টেস্ট করা হলে এমন আক্রান্তরা বের হয়ে পড়বেন।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ কেউ পড়ে যাচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। এদের কি হয় তা এখনো অজানা। তবে এটি হতে পারে, তার ভেতরে ভাইরাসটি ছিল কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। তিনি কোনো সমস্যাও বোধ করেননি; কিন্তু হঠাৎ জটিলতা দেখা দিলে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনাভাইরাসটি দেহে প্র্রবেশ করলে ব্লাডক্লট (রক্ত জমাট বাঁধা) তৈরি করতে পারে। এটি হলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারে। তিনি জানান, ফুসফুস আক্রান্ত করলেও খুব তাড়াতাড়ি জটিলতা তৈরি হয় না, একটু সময় পাওয়া যায়। কিন্তু হৃৎপিন্ডকে আক্রান্ত করলে সমস্যাটা দ্রুত দেখা দেয়। তিনি বলেন, এ জন্য সাবধানতা অবলম্বন ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন সময়ের দাবি হলো প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হওয়া যাবে না। কোথাও গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে এবং আরেকজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ শেষে দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *