নারায়নগঞ্জে রাব্বির উপর হামলা, প্রতিবাদে মিছিল

গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা রাজনীতি সারাদেশ

54ed0eddf6645608301060b1841837c5-Nganj-P9
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: নারায়নগঞ্জে রফিউর  রাব্বির ওপর হামলা হয়েছে। ঘটনার  প্রতিবাদে নগরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ।

পাপ্পু ভট্টাচার্য্যসন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত মেধাবী স্কুলছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ও তাঁর সহকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী কর্মী শ্লীলতাহানির শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় রাব্বিসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের কালীরবাজার চারারগোপ এলাকায় ত্বকী মঞ্চের লিফলেট বিতরণের সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলার এ ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী সেলিম ওসমানের সমর্থক জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে রাব্বি ও তাঁর সহকর্মীদের দাবি। তবে পুলিশ ও জাপা নেতারা ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।

হামলার ঘটনা সম্পর্কে রফিউর রাব্বি বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে ওদের হাতে (ওসমান পরিবার) কেউ নিরাপদ নয়।

রফিউর রাব্বি ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রথম বলেন, আজ বিকেলে তাঁরা শহরের আমলাপাড়া, কালীরবাজার, স্বর্ণপট্টি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্বকী মঞ্চের লিফলেট বিতরণ করছিলেন। লিফলেটে লেখা ছিল, ‘তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর সকল হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। ভোট আপনার পবিত্র আমানত। আপনার সন্তান ও শিশুদের কথা ভেবে অন্তত খুনি ও সন্ত্রাসী পরিবারের কাউকে ভোট দেবেন না।’ ওই সময় সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার মিজানুর রহমান একটি লিফলেট চেয়ে নেন। তাঁরা কালীরবাজারের ভেতরে লিফলেট বিতরণ শেষে চারারগোপ এলাকায় গেলে সেখানে তাঁদের পথরোধ করেন মিজান। ওই সময় জাতীয় পার্টির কিছু নেতা-কর্মীও সেখানে পুলিশের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। মিজান তাঁদের উদ্দেশে বলেন, লিফলেট বিতরণ নির্বাচনের আচরণবিধির লঙ্ঘন। ওই সময় জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি রাব্বিকে জানান, আচরণবিধির বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখবে। এরপর জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ত্বকী মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিতেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় ঘটনাস্থলে আরও ২০-৩০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে উপস্থিত হন মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব আকরাম আলী শাহিন। তাঁর ও পুলিশের উপস্থিতিতেই জাপা নেতা-কর্মীরা রাব্বি ও তাঁর সহকর্মীদের ওপর হামলা চালান।

হামলায় রাব্বি ছাড়াও প্রদীপ ঘোষ বাবু, আরিফ বুলবুল, মনির হোসেন, অমল আকাশ, জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ার হোসেনসহ ১০ জন আহত হন। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চিকিত্সা নিয়েছেন।
হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে আকরাম আলী শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ত্বকী মঞ্চের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিতর্কিত লিফলেট বিতরণ করছে। ভাষা যা-ই হোক, তারা লিফলেট বিতরণের সময় বলছে, খুনি ওসমান পরিবারকে ভোট দেবেন না।’ এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার সদর মডেল থানায় তাঁরা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলেও শাহীন জানান। শুক্রবারও একইভাবে লিফলেট বিতরণের খবর পেয়ে তিনি থানাকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তখন পুলিশ এসে ত্বকী মঞ্চের লোকজনের কাছে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তাদের মধ্যকার কয়েকজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষ তাদের ধাওয়া করে। সে সময় তিনি সাধারণ মানুষদের বিরত রাখেন।
জানতে চাইলে সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার মিজান বলেন, লিফলেট বিতরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক হয়েছে। কিন্তু কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রফিউর রাব্বি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা তিনি করেননি। যেহেতু পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটনা, তাই মামলা করে কতটা সুবিধা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নির্বাচন কমিশন যুগ্ম জেলা জজের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করেছে। তিনি বলেন, ‘সেকেন্ড অফিসার মিজান যখন আমাদের লিফলেট বিতরণে বাধা দেয়, তখন সেখানে নির্বাচন কমিশনের কেউ ছিলেন না। এতেই প্রমাণিত হয় মিজান কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অতি উত্সাহী আচরণ করেছেন।’
রফিউর রাব্বিদের ওপর হামলার ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এই প্রতিবেদক মডেল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদেরের মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ রাতে নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

রাব্বির বাসায় আইভী
সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভী রফিউর রাব্বিকে দেখতে তাঁর বাসায় যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ মাস আগে রফিউর রাব্বির নিরীহ মেধাবী ছেলে ত্বকীকে হত্যার পর এখন প্রকাশ্যে পুলিশের সামনেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হলো। ত্বকীর লাশ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল সেই চারারগোপ এলাকাতেই রাব্বির ওপর হামলা হয়েছে। একজন বিশিষ্ট নাগরিকের ওপর এ ধরনের হামলা জঘন্য ঘটনা। এ হামলার ঘটনায় আসন্ন উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হামলাকারী যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা।’
২৬ জুন অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আকরামও রফিউর রাব্বিকে দেখতে তাঁর বাসায় যান। তিনি রাব্বির ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *