কাজল ঘোষ: নানামুখি চ্যালেঞ্জে সরকার। কিছু দৃশ্যমাণ। কিছু অদৃশ্যমাণ। করোনা রোগী শনাক্ত বা পরীক্ষা নিয়েই রয়েছে ব্যাপক লুকোচুরির অভিযোগ। চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। কিট আনা, কোভিড-৯৫ মাস্ক আমদানি নিয়ে জালিয়াতি আর গণস্বাস্থ্যের কিট গ্রহণ না করা নিয়েও আছে বিতর্ক। একদিকে লকডাউন চলছে। অন্যদিকে পোষাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে।
কার্যত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবস্থা উটের মতো। মাথা নিচে গুজে কিছু না দেখা। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি পোষাক কারখানা খুলে দিলেন, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কি করলেন?
যে দেশে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে যায় সেখানে লকডাউন কতদিন রাখা সম্ভব। সিপিডি বলেছে, দেশের ৬০ ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত। আর ২০ ভাগ নিম্মবিত্ত। অর্থাৎ উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ বাদ দিলে বাকিদের অবস্থা তথৈবচ। ব্র্যাকের জরিপ বলছে, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কথাটি সাধু ভাষায় না বলে আরও স্পষ্ট বলা যায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষের এখন আয় বন্ধ। বেকার। সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। ১ কোটি মানুষকে প্রধানমন্ত্রী খাদ্য সহায়তা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি কি যথাযথভাবে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণে এন্তার অভিযোগ। শত শত বস্তা চাল উদ্ধারের খবর আসছে প্রতিনিয়ত মিডিয়াতে। আর প্রণোদনা যেভাবে ঘোষণা করা হয়েছে এতে রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, হকার তাদের জীবন জীবিকার স্পষ্ট কোনও দিশা নেই। রমজানে বাজারের অবস্থাও চড়া। খোলাবাজারের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সেখানে গেলে বোঝা যায়, সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্বের চেয়ে চাল ডাল অনেক বেশি জরুরি। সরজমিন দেখেছি সূত্রাপুর, নারিন্দা, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ভিড়ে ঠাসা মানুষের লাইন।
করোনার ৫০দিন ইতিমধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে। লকডাউন পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। আর কতদিন এভাবে চলবে এমন প্রশ্ন সকরেরই। আবার কোথাও কোথাও লকডাউন শিথিলও হচ্ছে। রমজান কেন্দ্রিক বিশাল যে ইফতার বাণিজ্য তা এবার বন্ধ। ঈদ নিয়ে মানুষের সামনে এক গোলকধাঁধা। যে আনন্দ নিয়ে আসে ঈদ, তা তো ম্লান হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতির ধাক্কাতেই। করোনার ছোবল সব কাবু কওে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। তার বেঁচে থাকার জন্যই পথে নামতে হবে। কারণ, মধ্যবিত্ত না পারছে ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে না পারছে কারও কাছে হাত পাততে। রাতের শহর এখনও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিনেও বিভিন্ন স্থানে চালের ট্রাক লুটের খবর আসছে।
এই যখন অবস্থা তখন মধ্যবিত্তের জন্য বড় দুঃসংবাদ, সঞ্চয়পত্রের সুদ না দেয়া। ব্যাংকে গেলে গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, এখন সুদ দেয়া হবে না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারপর। কথা হচ্ছে, যে পরিবারটি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল তাদের কি হবে। রাষ্ট্র কি তাদের জন্য মানবিক হবে না? মানুষ এখনও বাধ্য হয়ে নিজেদের হাতের পাঁচ বা জমানো টাকা শেষ করছে। অনেকেই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলছেন ডিপিএস।
ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষা, করোনা চিকিৎসায় যুক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা, ভাসমান দিনমজুরসহ নানান পেশার শ্রমিকদের নূন্যতম খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বত্র ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা, সরকারের দেয়া প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ার সর্বত্র লেজেগোবরে অবস্থা। কোভিট-১৯ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সামাল দিতে সকল শ্রেণীপেশার বিশেষজ্ঞ বা নাগরিকদের নিয়ে করণীয় নির্ধারণ সত্যিকার অর্থেই জরুরি। না হলে দেশ এক কঠিন বিপর্যয়ের চক্রে আটকে যাচ্ছে ক্রমশ।
আপনার মতামত দিন