অবরোধ চালিয়ে যেতে খালেদার নির্দেশ : সরকার গুপ্তঘাতক নামিয়েছে : রিজভী

Slider জাতীয়
100255_rezvi bnp

রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে টানা বারোদিন পার করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত ৩ জানুয়ারি রাতে অবরুদ্ধ হন তিনি। পরে তার কার্যালয়ের সামনের সড়কে জলকামান, পুলিশ বহনকারী বড় ট্রাক, ইট-বালু বোঝাই ট্রাক দিয়ে পথরোধ করা হয়। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার এবং সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে আন্দোলনের খোঁজখবর নিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই প্রতিদিনের মতো গতকালও তাকে দেখতে যান মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী। তাদের মাধ্যমে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অবরোধ ও হরতাল সর্বাত্মকভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া।

 

এদিকে অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও তার কার্যালয়ে বাইরের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। বড় ভ্যান ও জলকামান দিয়ে রাস্তা অবরুদ্ধ করে কার্যালয় ঘিরে করে রাখে পুলিশ। পাশাপাশি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুই পাশে পুলিশের ব্যারিকেড ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আগের মতোই ছিল। কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মাথায় হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নারী পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া প্রধান ফটকের তালাও ছিল খোলা।

 

এমন অবস্থার মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টায় মহিলা দলের সহসভাপতি ডা. নূরজাহান মাহবুবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রান্না করা খাবার নিয়ে দেখা করতে আসেন খালেদা জিয়ার সাথে। এসময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন- মহিলা দলের নেত্রী মনি বেগম, শামসুন নাহার, সাজেদা আলী হেলেন, শিরীন জাহান এবং রোকেয়া সুলতানা।

 

সাক্ষাৎ শেষে কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে আন্দোলনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য তুলে ধরেন ডা. নূরজাহান মাহবুব। তিনি বলেন, অবরোধ ও হরতাল সর্বাত্মকভাবে পালনে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ে যে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে সে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ারও আহবান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

 

এরপর বেলা ১ টা ২০ মিনিটে খাবার নিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেহেরুন্নেসা হক, নারী নেত্রী সুরাইয়া বেগম, আসমা আরেফিন, হুসনে আরা চৌধুরী এবং মরিয়ম বেগম।

আসমা আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়া অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যাডামের মনোবল এখনো দৃঢ় আছে বলে তিনি জানান।

নেতাকর্মী শূন্য নয়া পল্টন কার্যালয়

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় এখন নেতাকর্মী শূন্য। গত ৩ জানুয়ারি রাতে সেখান থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অ্যাপোলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কার্যালয়ের প্রবেশ পথের মেইন গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। সেদিন থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কোনো নেতাকর্মী প্রবেশ করেননি। বাইরে পুলিশের কড়াকড়ি রয়েছে। মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় আছে দাঙ্গা পুলিশ। নয়া পল্টনের সড়কে রাখা আছে একটি জলকামান, পুলিশের প্রিজন ভ্যান, রায়টকার। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সেই এলাকায়।

 

গুপ্তঘাতক নামিয়েছে সরকার- রিজভী: এ দিকে গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলীয় অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, সরকার পতন পর্যন্ত অবরোধ চলবে। বিরোধী নেতাকর্মী ‘হত্যা করতে’ সরকার পাড়া-মহল্লায় ‘গুপ্তঘাতক’ নামিয়েছে অভিযোগ তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ওই গুপ্তবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন।

 

তিনি বলেন, জনগণের তুমুল আন্দোলনের চাপে শেষ বিষাক্ত ছোবল দেওয়ার জন্যই গুপ্তবাহিনী নিয়ে সরকার বিভিন্ন স্থানে কমিটি গঠন করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করার জন্য তারা গুপ্তঘাতকদের নামিয়ে দিয়েছে পাড়া-মহল্লায়। বিএনপির অবরোধের মধ্যে নাশকতা ঠেকাতে ১৪ দল সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর রিজভী এ মন্তব্য করলেন।

 

তিনি বলেন, ভয়ঙ্কর দু:শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের চলমান আন্দোলনের উদ্দেশ্য। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বর্তমান অবৈধ সরকারকে অপসারণ করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। আমি শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

 

এ ছাড়া রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে বোমা নিক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, পেশাদার কূটনীতিক রিয়াজ রহমানের ওপর যারা আঘাত করেছে তারাই রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে ৪ জন যাত্রীকে হত্যা ও ১২ জনকে আহত করেছে।

 

তিনি বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে সরকারী এজেন্ট দিয়ে যানবাহনে নাশকতা চালিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর সেই পুরনো খেলায় আবারও মেতে উঠেছে বর্তমান অবৈধ সরকার। রিজভী অবিলম্বে রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান এবং নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।

 

উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঠিক দুদিন আগে ৩ জানুয়ারি শনিবার রাতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশ বেষ্টনীতে অবরুদ্ধ হন বেগম খালেদা জিয়া। এখনো পুলিশী বেষ্টনীতেই অবরুদ্ধ তিনি। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিজের চেম্বারে অনেকটা শুয়ে-বসে সময় কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসনের। মাঝেমধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও অন্যান্য নেত্রীদের সঙ্গে গল্প-এভাবেই কাটছে বেশিরভাগ সময়।

 

বর্তমানে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে রয়েছেন সেলিমা রহমান, মারুফ কামাল খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এম এ কাইয়ুম, সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, শামসুল আল আমীন ডিউ। এ ছাড়া অফিস সহকারী ও চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা স্কোয়াডের সদস্যরা রয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *