গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ভারত-বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে ট্রাকের জট নিত্যদিনের ঘটনা। ফাইল ফটো
বাংলাদেশ থেকে মোটরচালিত যানবাহন যাতে সরাসরি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই মর্মে একটি ক্যাবিনেট নোটও প্রস্তুত করেছে, যা এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কসহ আঞ্চলিক উন্নয়নে সহযোগী বেশ কিছু সংস্থা এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরকারি সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, আপাতত পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকেই এই সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এই অঙ্ক দিন দিন যতই বাড়ছে, ততই সীমান্তের স্থল বন্দর আর সেখানকার শুল্ক অফিসগুলোতে লম্বা হচ্ছে ট্রাকের লাইন।
ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বলেন, দুটি দেশের ট্রাক যদি সরাসরি পরস্পরের ভূখণ্ডে যেতে পারত, তাহলে এই জট কাটিয়ে উঠে আরো অনেক বেশি গতি পেত বাণিজ্যিক লেনদেন।
আপাতত একতরফা সুবিধা
তিন বছর আগে এই লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক একটি মোটর ভেহিক্যালস চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে অনেকটা এগিয়েও ছিল ভারত ও বাংলাদেশ, যদিও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
কিন্তু এখন ভারত সরকার একতরফাভাবেই বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিতে চাইছে, যার ফলে বাংলাদেশী নম্বরপ্লেটের গাড়ি পণ্য নিয়ে সরাসরি ভারতে ঢুকতে পারে।
দিল্লির অন্যতম শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকরিয়ের এই উদ্যোগে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপিকা ড: অর্পিতা মুখার্জী বলেন এর ফলে বানিজ্যে অনেক সুবিধা হবে। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সীমান্তে ট্রাকগুলো থেকে মালপত্র নামাতে হয়, তারপর আবার নতুন করে অন্য দেশের ট্রাকে সেগুলো তুলতে হয়, ফলে সেটা বিরাট ঝামেলার, সময়ও লেগে যায় অনেক।
ড. মুখার্জীর মতো অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটাই এমন, যে শুধু সেটাকে কাজে লাগিয়েই তারা ভারতের দুটি প্রান্তের মধ্যে যেমন, তেমনি আসিয়ান জোটভূক্ত দেশেগুলোর জন্যও একটা গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট করিডর হয়ে উঠতে পারে। বিনিময়ে ট্রানজিট ফি আদায় কিংবা আরো নানাভাবে দারুণ লাভবানও হতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে যাতে সে কাজে উৎসাহিত করা যায়, সে জন্যই বাংলাদেশী যানবাহনের জন্য এই বিশেষ সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এডিবি বা জাপানের মতো উন্নয়ন সহযোগীদেরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে।
কিন্তু এ ব্যবস্থাটা চালু হওয়ার আগে নানা টেকনিক্যাল ও আইনি সংস্কারও জরুরি, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে অর্পিতা মুখার্জী বলেন, এক দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স অন্য দেশে বৈধ হবে কি না, কিংবা ভারতের ভেতর বাংলাদেশী ট্রাক কতদূর যাওয়ার পারমিট পাবে, দেখতে হবে সেটাও।
ডিএইচএলে-র মত কুরিয়ার সার্ভিসের দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, যে সব সংস্থার ভারত ও বাংলাদেশ দুটি দেশেই ব্যবসা আছে তারা এর ফলে সবচেয়ে লাভবান হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে তারা একটা ট্রাক ভারতে পাঠালে সেটা তো খালি ফিরবে না, পণ্য নিয়েই সেটা ফিরবে।
ভারত আশা করছে বাংলাদেশী যানবাহনকে নিজেদের ভূখণ্ডে ঢুকতে দিলে একদিন-না-একদিন বাংলাদেশও ভারতীয় গাড়িকে সেই পাল্টা সুবিধা দিতে বাধ্য হবে।
অনেকটা সেই ভরসাতেই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে ওই ক্যাবিনেট নোট, যা অনেকটাই বদলে দিতে পারে দ্বিপাকি বাণিজ্যের চিত্র।
সূত্র : বিবিসি