খালেদার মুক্তির জমায়েত থেকে সাংবাদিক করোনা সংক্রমিত : তথ্যমন্ত্রী

Slider জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া


খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে দলটির নেতাকর্মীরা যে জমায়েত করেছিলেন, ‘সেখান থেকে’ একজন সাংবাদিক নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন বলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।

অতি সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় যেখানে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, সেই সময়ে ওই জমায়েত করার জন্য বিএনপি নেতাদের ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানোর দিন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করেন। বিএনপি যে নানা ধরনের দোষ-ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করছে, সেদিন যে ঢাকা শহরে হাজার হাজার লোকজনের জমায়েত তারা করেছে। সেই জমায়েত থেকে ইতোমধ্যে একজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

“সুতরাং যেখানে একজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে এই সমাবেশ থেকে আরও কত শত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।”

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়া।ওই দিন বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী হাসপাতালে ভিড় করেন, পরে তারা খালেদার গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে গুলশানের বাসা অবধি যান।

ওই ঘটনার পর বিএনপি নেতাদের এই ভাইরাস মোকাবেলার পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলার আর কোনো ‘নৈতিক অধিকার নেই’ বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।তিনি বলেন, “যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনষ্ঠান বাতিল করেছিলেন, সেখানে ২৫ মার্চ ঢাকা শহরে রীতিমতো সমাবেশ করল বিএনপি। সুতরাং এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ, এই দায়িত্বহীন আচরণ যারা করেন তাদের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সরকারের দোষ-ত্রুটি নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই।”

সাংবাদিকদের বিএসএমএমইউতে যাওয়ার পরামর্শ

সাংবাদিকদের কারও নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হলে তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি কোনো সাংবাদিকের এ সংক্রান্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, তারা যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।”

সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহের জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যবস্থা হচ্ছে

ত্রাণ আত্মসাতে যাদের নাম আসছে তারা মোট স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের এক শতাংশও নয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ত্রাণ আত্মসাতের বিষয়ে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। এই ত্রাণ নিয়ে যে অনিয়মের কথা বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়েছে এগুলো সরকারই উদঘাটন করেছে, এগুলো কোনো বেসরকারি সংস্থা উদঘাটন করেনি। এগুলো সরকারের পুলিশ বাহিনী সরকারের নির্দেশে করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

“বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ৭২ হাজারে বেশি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি আছে। সেখানে ৪৫ জন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শতকরা হিসেবে দুই হাজারে মধ্যে একটি ঘটনা। যদিও একটি ঘটনাও কাম্য নয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই জন্যই ঘোষণা করেছেন, যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবেন তাদের মোবাইল কোর্টে বিচার হবে এবং এর পরে রেগুলার মামলার মাধ্যমে আরও বিচার হবে।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, এখানে ৪৫টি ঘটনার সবগুলো কিন্তু এখনও প্রমাণিত নয়, ছয়টি ঘটনা প্রমাণিত এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজন মেম্বারকে বরখাস্ত করেছে। সুতরাং সরকার এই সমস্ত ঘটনাকে কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর।”

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকার পরও খালেদার মুক্তির দিনে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভিড় জমান বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
‘বিদেশি লবিস্ট নিয়োগের’ টাকা দুর্গতদের দিনসরকারের সমালোচনা না করে দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচতে ‘বিদেশি লবিস্ট নিয়োগে’ যে টাকা ব্যয় করা হয়, তা এই সময়ে দুর্গত হয়ে পড়া জনগণের মাঝে বিতরণ করতে বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। তারা জনগণের কাছে কোথায়? আমরা দেখতে পাচ্ছি দু-একটি ফটোসেশন ছাড়া লোক দেখানো, ছবি দেখানো ছাড়া আর জনগণের পাশে নেই। তারা ঢাকার কয়েকটি স্থানে ফটোসেশনেই ব্যস্ত ছিলেন, আর সেখানে সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত।

“বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা বন্ধ করার জন্য, তারেক রহমানের দুর্নীতির মামলা বন্ধ করার জন্য লাখ লাখ ডলার খরচ করে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। অথচ জনগণের পাশে তারা নাই। তাদের অনুরোধ করব, বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ না করে এসব টাকা জনগণের জন্য খরচ করুন।”

চেয়ারম্যান, মেম্বারদের ত্রাণ আত্মসাৎ নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “এই সব ঘটনা নিয়ে যেভাবে ব্ক্তব্য রাখা হচ্ছে, বিশ্ষে করে বিএনপির পক্ষ থেকে যেভাবে বলা হচ্ছে, আমি বিএনপিকে বলব- একবার আয়নায় নিজেদের চেহেরাটা দেখুন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল ক্ষমতায় থেকে দেশকে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, সেই বিশ্ব চোরদের মুখে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার নাই।”

বিএনপিকে দোষ-ত্রুটি খোঁজার অভ্যাস বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমি আবারও বলব, এই মহাদুর্যোগে সব কিছু নিয়ে রাজনীতি করার সময় নয়। আমি বিএনপিসহ সবাইকে অনুরোধ জানাব, আসুন একে অপরের বিরুদ্ধ রাজনীতি বন্ধ রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাঁশে দাঁড়াই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *