পহেলা বৈশাখ আসছে আরো একটি প্রণোদনা প্যাকেজ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়


ঢাকা: করোনার বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এই প্যাকেজের আওতায় দেশের ছিন্নমূল প্রান্তিক গোষ্ঠীকে সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ক্ষেত্রে শহর ও পল্লী এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৪০ লাখ অতি দরিদ্র পরিবারের কাছে অন্ততপক্ষে তিন মাস নগদ আর্থিক সহায়তা সরাসরি পৌঁছে দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, এই প্যাকেজে কৃষকদের ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ দেয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্যাকেজের খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত করতে আজ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্যাকেজটি চূড়ান্ত হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ১ বৈশাখের দিনে জাতির উদ্দেশ্য ঘোষণা করতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দুই দফায় মোট পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই প্যাকেজগুলোর পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবার সর্বোচ্চ একবারে পাঁচ কেজি চাল পাচ্ছেন। কিন্তু এবার শুধু চাল নয়, নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্র প্রায় ৪০ লাখ পরিবারকে মাসে দুই থেকে আড়াইহাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হতে পারে। কিন্তু এই অর্থ তাদের কাছে কিভাবে পৌঁছানো যায় সেটি একটি বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রে একটি চিন্তা রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংর মাধ্যমে এই অর্থ প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’ কে এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ প্যাকেজের বিষয় নিয়ে কাল (আজ রোববার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ষষ্ঠ প্যাকেজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এই প্যাকেজের মধ্যে একটি বিষয় থাকবে শহর ও পল্লী এলাকায় প্রায় ৪০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের কাছে নগদ টাকা পৌঁছে দেয়া। এই পরিবারগুলোর মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত বস্তিবাসীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোটামুটি এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাস তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। প্রতিটি পরিবারকে মাসে দুই থেকে আড়াইহাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হবে। অবস্থা বিবেচনায় টাকার অঙ্কটা কিছুটা বাড়তেও পারে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। দরিদ্র পরিবারকে এই পরিমাণ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে আমরা মোবাইল অপারেটরদের সহায়তা নেবো। এই প্যাকেজের আওতায় রিকশাচালক, কুলি, হোটেল বয়, দোকান কর্মচারীরাও সুবিধা পেতে পারেন।

এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানান।

প্যাকেজের আওতায় কৃষকদের দুই-তিন শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার বিষয়টিও আসতে পারে। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। এই ঋণের জন্য বরাদ্দ থাকতে পারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদের ভর্তুকি সরকার কর্তৃক বহন করা হবে বলে সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, এর আগে মোট পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজগুলো ছিলো-
প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধায় দেয়া হয়। এতে ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়নের ঘোষণা দেয়া হয়। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান বহন করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।

প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান- ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা দেয়া হবে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।
এ ঋণসুবিধার সুদের হারও হচ্ছে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো : ব্যাক-টু- ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানিসুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর+১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩ %) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

প্যাকেজ-৪ : প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণসুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্যাকেজ-৫ : এর আগে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্যাকেজটি বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে। এটি আওতায় ৮০ ভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *