করোনাভাইরাসে বিশ্ব যোগাযোগ বিচ্ছিন্নপ্রায়: পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলার উদ্যোগ হিসেবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছেন। ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। ১৩ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনো বিদেশি নাগরিক ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর আগে চীনসহ ইউরোপ-আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ অনেক দেশের বিমান সংস্থা কয়েক লাখ ফ্লাইট বাতিল করেছে। এসব দেশ তাদের বেশিরভাগ বন্দরও বন্ধ করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক ট্রিলয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্ব। আড়াই মাস আগে চীনের উহান থেকে বিশ্বের ১১৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ রোগে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছেন চার হাজার ৯২৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৬০। সেরে উঠেছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এদিন নতুন আক্রান্ত সাত হাজার ৩৬০ ও মৃত্যু হয়েছে ৩৭৫ জনের। এর মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। এদিকে ভারতের কর্ণাটকে করোনা আক্রন্ত ৭৬ বছর বয়সী ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশটিতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। খবর এএফপি ও বিবিসির।

আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংশ ঘটনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে। তবে দেশটি কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাদুর্ভাব সামলে উঠতে শুরু করেছে। হুবেই প্রদেশে ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা প্রথম ধরা পড়ে। সেই হুবেইতে বুধবার নতুন রোগীর সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। এদিন সেখানে মাত্র ৮ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চীনের অন্যত্র সংক্রমিত হয়েছেন সাতজন। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৯৮০ জন। চীনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬২ হাজার ৭৯৩ জন, যা মোট সংক্রমণের ৮০ শতাংশ। বুধবার আরও ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ জনে। হংকংয়ে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রাদুর্ভাব।

চীন পরিস্থিতি সামলে ওঠার পর এখন সংক্রমণ বাড়ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। চীনের পর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইউরোপের ইতালিতে। দেশটিতে ১২ হাজার ৪৬২ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে সহস্রাধিক মানুষের। পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা এই সংখ্যা থেকে পরিস্কার। দেশটিতে পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। গতকাল থেকে নির্দিষ্ট সুপারশপ ছাড়া সব ধরনের মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইরানে আক্রান্ত ১০ হাজার ৭৫ ও মৃত্যু ৪২৯, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত সাত হাজার ৮৬৯ ও মৃত্যু ৬৬, স্পেনে আক্রান্ত দুই হাজার ২৭৭ ও মৃত্যু ৫৫, ফ্রান্সে আক্রান্ত দুই হাজার ২৮৪ ও মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। জাপানে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩৯ এবং মারা গেছেন ১৭ জন, ইরাকে আক্রান্ত ৭১ এবং মৃত্যু ৮। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, মরক্কো, পানামা, পোল্যান্ড, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলে একজন করে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মারা গেছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টুইটারে জানানো হয়, কূটনৈতিক কর্মকর্তা, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিদের ভিসা বাদে ভারতের অন্য সব ধরনের ভিসা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে চীন, ইতালি, কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে ভ্রমণ করা ভারতীয় নাগরিকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও স্ত্রী সোফি গ্রেগরি স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে সোফি গ্রেগরির মেডিকেল চেকআপ করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি ইউরোপ থেকে আগামী ৩০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ স্থগিতের ঘোষণা দেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। এই ‘কঠোর কিন্তু প্রয়োজনীয়’ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্যের জন্য কার্যকর হবে না বলে তিনি জানান। যদিও যুক্তরাজ্যে ৪৬০ জনের এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে গতকাল যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, তাদের দেশে পাঁচ থেকে ১০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। একই দিন ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী সপ্তাহে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় ব্রেক্সিট বৈঠক স্থগিত করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী কভিড-১৯ অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব ফেলেছে তা মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক বাজার চাঙ্গা রাখতে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে এক হাজার ১৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জন মারা গেছেন।

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতাদের ব্যর্থ বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো সতর্কতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছে ইইউ দেশগুলো। আমাদের দেশের সীমানার মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *