পাপিয়াকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ইস্যুতে বিব্রত আওয়ামী লীগ। পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও সংসদ সদস্যের নাম আসায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। মধ্যম সারির নেতারা বিরক্ত। এ ঘটনায় দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও অস্বস্তিতে আছেন। তারা বলছেন, ক্যাসিনোকাণ্ডের মতোই পাপিয়াকে ঘিরে একটি অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছিল। যারা প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম করেছে। যারাই এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হওয়া উচিত।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা পাপিয়ার ডেরায় যাওয়া ব্যক্তিদের নাম দেখে দলের নেতাকর্মীরাই অনেকে অবাক হয়েছেন। এ নিয়ে কথা বলতেও কেউ কেউ বিব্রতবোধ করছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, পাপিয়া ইস্যুতে আমরা কেবল শুনছি কয়েকজন এমপি জড়িত। কিন্তু কারও নাম তো দেখছি না। তালিকা পাচ্ছি না। আনুষ্ঠানিকভাবে যখন কারও নাম পাওয়া যাবে বা অন্য কিছু পাওয়া যাবে তখন তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতে পারে। এর আগে আসলে এ নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, মিডিয়াতে এখন পর্যন্ত কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে পাপিয়াকে জড়িয়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই দলীয় কার্যালয় ও নিজেদের কর্মক্ষেত্রে গরহাজির বলে জানা গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশিরভাগ সময় সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ধানমন্ডি কার্যালয়ে। তার সংবাদ সম্মেলন ঘিরে নেতাদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। এখন নেতারা কম ভিড় করছেন। সাম্প্রতিক একটি সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ছাড়া কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা মানবজমিনকে জানান, শামিমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এবং আওয়ামী যুব মহিলা লীগ বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছে। বিশেষ করে পাপিয়ার সঙ্গে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং মন্ত্রীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এটি তাদের মধ্যে বিরাট অস্বস্থি তৈরি করে। বিষয়টি নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন,পাপিয়ার পেছনে যারা আছে,তারাও নজরদারিতে রয়েছে। শুধু পাপিয়া নয়, অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত তারা নজরদারিতে আছে। টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দেশের যে প্রান্তেই হোক, অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকের সঙ্গে দলের লোকজনও যদি জড়িত থাকে তারাও রেহাই পাবে না। তারা নজরদারিতে চলে এসেছে। থেমে থেমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এসব অপকর্মের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে তারাও রেহাই পাবে না। এদিকে পাপিয়ার উত্থানের পেছনে যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রী ও সাবেক মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম জোরালোভাবে প্রচার হয়েছে। এ নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সর্বশেষ সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন তার ফেসবুক পেইজে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি নিজেই আমার গ্রেপ্তার চাই। প্রতি মুহুর্তে মিথ্যে অপবাদ নেয়ার চাইতে মৃত্যু আমার কাম্য। আমাকে নিয়ে সত্যের মুখোমুখি করেন। আমি দোষী হলে জেল দেন। আমি এত নিউজের মধ্যে আর আমার পরিবারকে ফেলতে চাই না। তিনি আরও বলেন,আমার বিচার শুরুর আগেই ফাঁসি হয়েছে। একজন কর্মীর সঙ্গে না জেনে মিশে কত অপরাধ করেছি। একবার গাড়ির ব্যবসার পার্টনার আরেকবার চাঁদাবাজ তাও নিজ বান্ধবীর বাসায়। ঢাকা মহানগরের এত ক্ষমতা যে কাউকে নমিনেশন দিতে পারে সেখানেও জড়ানোর চেষ্টা। আমি নিজেই এমপি হতে পারি নাই। আমার এত ক্ষমতা আমিই যেন সর্বেসর্বা। আমার দূর্দিনের সহযোদ্ধা যারা আমাকে চিনে তারাও নীরব। পাপিয়া আমার সাথে গিয়ে ছবি তুলেছে সেখানে আমার বাচ্চাদের ছবিসহ দেয়ার মানে কি? আমার ফেসবুক থেকে এত পুরনো ছবি বের করেছে কারা কি উদ্দেশ্যে। আমি টাকার পাহাড় আর নিজেরই সহযোদ্ধাদের হিংসার জালে আজ ক্ষতবিক্ষত। আমি এত মিথ্যা প্রেসার নিতে পারবো না। আমি অনুরোধ করি দয়া করে সকালেই আমাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সত্যের মুখামুখি করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান,দলের নাম ভাঙিয়ে ও কোনোভাবে পদ ভাগিয়ে নিয়ে ঢাকা মহানগর পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মী অপকর্মে যুক্ত, তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দলে চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ আরো জোরালো করা হচ্ছে। এছাড়া দলের শীর্ষ নেতা, সারা দেশের মহানগর, জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আলাদা প্রতিবেদনও তৈরি করিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জন্য দায়ী ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কারো অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বেলায় জিরো টলারেন্স অবস্থানে থাকতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তারা আরও জানান,সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত ও দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করছেন যারা, তাদের আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দুইভাবে অভিযান চলতে থাকবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করার আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা ও তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে দলের নেতারা জানান,সারাদেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে বিতর্কিত কারা কারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ রয়েছে, নতুন করে সেসব খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাপিয়ার পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদের খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এদিকে গণভবনে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সাক্ষাৎ করতে গেলে পাপিয়ার মতো ব্যক্তিকে পদ দেয়ায় যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেত্রীকে ভৎর্সনা করেন দলীয় প্রধান। এ সময় তিনি সংগঠনটির সর্বস্তরে যাচাই-বাছাই করে আরো কত ‘পাপিয়া’ আছে, তা খুঁজে বের করে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। গত ২২শে ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামীকে আটক করে র‌্যাব। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তারা আরও দুজন সহযোগীসহ ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *