অবরোধে অচল দেশ

Slider জাতীয়
image_113033_0
ঢাকা: অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার সারাদিন এভাবেই তালাবদ্ধ ছিল রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক -যাযাদিআন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশের টিয়ারশেল-গুলি, পিকেটারদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগি্নসংযোগ ও বোমাবাজির মধ্য দিয়ে বিএনপি জোটের দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন পার হয়েছে। রেল ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সড়ক পথে কোনো যানবাহন চলাচল না করায় সারাদেশ থেকে রাজধানী ঢাকা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দর বাড়তে শুরু করেছে। নাশকতার আতঙ্কে স্বাভাবিক কর্মকা-ে ছেদ পড়ায় শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
প্রথম দিনের অবরোধ চলাকালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ঢাকায় এক আনসার সদস্য অগি্নদগ্ধ হওয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্ন আঘাতে গুরুতর জখম অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সড়ক অবরোধ, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা, হামলা, ভাংচুর, অগি্নসংযোগ ও বোমাবাজির অভিযোগ পুলিশ এ সময় ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
অবরোধের প্রথম দিন বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বরিশাল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও খুলনাসহ অন্তত ৩৮ জেলায়। এছাড়া গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়িসহ বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় পণ্যবাহী একটি ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মহাসড়কের দখল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আটকা পড়া অন্তত ১০ হাজার পর্যটককে স্থানীয় প্রশাসন সোমবার রাতে পুলিশ ‘স্কট’ দিয়ে চট্টগ্রাম পেঁৗছে দেয়ার ব্যবস্থা করলেও মঙ্গলবার এ সাহস পায়নি। প্রশাসনিক সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রামে হরতাল থাকায় পুলিশ এ উদ্যোগ নেয়নি। তবে ভিআইপিদের বিশেষ ব্যবস্থায় সড়ক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওদিকে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি অলিগলিতে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। রাতভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে টহল দিয়েছে বিজিবি। জলকামান ও রায়ট কার নিয়ে পুলিশ টহল দেয় রাজপথে। অবরোধ কর্মসূচি পালনে নগরীতে বিএনপি জোটের কেউ মাঠে না নামলেও আতঙ্কিত মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি।
রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বড় ধরনের কোনো পিকেটিং না করলেও বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছয়টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ সময় মনোয়ার হোসেন (৪০) নামে এক আনসার সদস্য দগ্ধ হন।
রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সামনে দুপুর ২টার দিকে একটি বিআরটিসি বাস ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পেঁৗছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই গাড়ি দুটি পুড়ে যায়।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা মেট্রো ব-১১-২৩৩৭ নং গাড়িটিতে আগুন দেয়ার পর বাস থেকে নামতে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে গাড়িচালক ও দুই যাত্রী আহত হন। গাড়িচালক দুলাল জানান, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার সময় শাহবাগ মোড় পার হতেই পেছন থেকে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কেউ পেছন থেকে গাড়িতে অগি্নসংযোগ করেছে।
একই সময়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা সাহাজাদি সুলতানা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে গুলিস্তান-গুলশান রুটের একটি ৬ নাম্বার বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-১৫৪৬) আগুন দেয় পিকেটাররা। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার জিয়াউদ্দিন জিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া রাজধানীর কদমতলীর লাল মসজিদের সামনে পুলিশের একটি লেগুনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আনসার সদস্য মনোয়ার হোসেন (৪০) দগ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ পুলিশ বহনকারী লেগুনায় হামলা চালায়। তারা গাড়ির সামনের গ্লাস ভাংচুর করে এবং পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। এতে মনোয়ার হোসেনের মুখ ঝলসে যায় এবং দুই হাত দগ্ধ হয়।
সন্ধ্যায় গুলিস্তানে একটি ৬ নম্বর বাসে এবং মহাখালীতে ১৪ নম্বর বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় পিকেটাররা।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পাশে ৬ নম্বর (মতিঝিল-গুলশান) রুটের একটি বাসে আগুন দেয়া হলে দমকলকর্মীরা গিয়ে তা নেভায়।
দমকল বাহিনীর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মী জিয়াউর রহমান জানান, দমকল বাহিনীর তিনটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
একই সময় মহাখালীর আমতলী মোড়ে বনানী-মিরপুর রুটে চলাচলকারী একটি বাস পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
২০ দলের ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের অবরোধে রাজধানী বাড্ডার শাহাজাদপুরে রাস্তা অবরোধ করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর শাহাজাদপুরে শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক রাকিব মাহমুদ সজলের নেতৃত্বে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। এসময় শিবিরকর্মীরা রাস্তায় ইট পাটকেল ফেলে অবরোধ করে রাখে। এ অবস্থায় পুলিশ দূর থেকে গুলি করতে থাকে। শিবিরকর্মীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় ২০ মিনিট শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে শিবিরকর্মীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এসময় রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিএমএম কোর্টের মূল গেটের সামনে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সদরঘাট থেকে মিরপুরগামী ইউনাইটেড বাসটি সিএমএম কোর্টের মূল গেটের সামনে এলে বাসকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ৬টি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় দুর্র্বৃত্তদের ছত্রভঙ্গ করতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
আদালত এলাকায় কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুজন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন বাঁশেরপুলে আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রায় শতাধিক যুবক এসে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের বাঁশেরপুলে আওয়ামী লীগের মাতুয়াইল ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাধা দিতে এলে ছাত্রলীগকর্মীদের ধাওয়া দেয় তারা। এ সময় পাঁচটি ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।
রাজধানীসহ সারাদেশে ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে ট্রেন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন গতকাল নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলো প্রায় নির্ধারিত সময়ে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে এসে উপস্থিত হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, প্রতিদিনের নির্ধারিত ৭০টি ট্রেন মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। সব ট্রেনেই ছিল যাত্রীর চাপ।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন যায়যায়দিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজে রেলের অন্য বিভাগের লোকবলকেও দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া যে কোনো তথ্য আদান-প্রদানের জন্য রেলের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সার্বক্ষণিক খোলা আছে।’
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলে দেখা যায়, চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন সকালে স্টেশন ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগে এসে প্লাটফর্মে অবস্থান নেয়। নানা বয়সের যাত্রী হুড়োহুড়ি করে তাতে ওঠেন। এ সময় কয়েকজন যাত্রী যায়যায়দিনকে জানান, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে যেতে হচ্ছে। সায়েদাবাদ এলাকা থেকে সকালে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না যাওয়ায় তারা ট্রেনে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। দূরপাল্লার বাস তেমন ছেড়ে না যাওয়ায় অনেক যাত্রী গন্তব্যে পেঁৗছতে গতকাল নির্ভর করেন ট্রেনের ওপর।
বিকাল সাড়ে ৩টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে পেঁৗছায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেন। কয়েকজন যাত্রী জানান, রেলপথে নাশকতার কোনো খবর পাওয়া না গেলেও নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে তারা চলাচল করেন।
এদিকে বিএনপির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথমদিনে নৌ পথে লঞ্চ চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দেশের বৃহৎ নৌ টার্মিনাল সদরঘাট থেকে লোকাল ও দূরপাল্লার রুটগুলোতে লঞ্চ ছেড়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। তাই কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পেয়ে অনেক লঞ্চই তাদের সিডিউলের যাত্রা বাতিল করে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধের কারণে গতকাল টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ ছিল না। দেশের সব রুটে লঞ্চ ছেড়ে যায়। আবার ঢাকার বাইরে থেকেও লঞ্চ আসে। এদিন সুন্দরবন, পারাবাত, টিপু, সুরভী লঞ্চগুলো যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকালে প্রতিদিনের মতো ভোলার বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, আমতলী, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুরে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সুন্দরবনের এক কর্মকর্তা জানান, টার্মিনালে অবরোধের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো ধরনের মিছিল মিটিং হয়নি। কিন্তু অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী কম। এ কারণে বিভিন্ন রুটেও লঞ্চ কম চলছে।
এ ব্যাপারে যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, দূরপাল্লার যে কোনো রুটে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু যাত্রী না পেয়ে অনেক রুটেই সব লঞ্চ চলাচল করেনি। তিনি বলেন, এদিন লোকাল ও দূরপাল্লার সব রুটেই ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। নৌ পথে নির্বিঘ্নে লঞ্চ চলাচল করেছে বলে তিনি জানান।

বরিশাল : ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহর বরিশালে প্রথম দিনে মঙ্গলবার ঢিলেডালাভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রাস্তায় অগি্নসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল ও শিবির। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল পৌনে ৭টায় মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনের নেতৃত্বে নবগ্রাম সড়কের ঠাকুর বাড়ির পোলে গাছের গুঁড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। এ সময় একটি ঝটিকা মিছিল থেকে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরীর হাসপাতাল রোড এলাকার কারিকর বিড়ির ফ্যাক্টরির সামনে ছাত্রদল আরেকটি ঝটিকা মিছিল বের করে। সে সময় আরো ২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটালে পুলিশ তাদের তাড়া করলে ১টি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায় মিছিলকারীরা। পরে সেখান থেকে পুলিশ জামায়াত ও বিএনপির ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া বরিশাল-ঝালকাঠি সড়কে রুপাতলী নামকস্থানে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তবে বেলা বাড়ার পর বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতাকর্মীদের কোথাও অবরোধ কর্মসূচি করতে দেখা যায়নি।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় অবরোধ চলাকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক দখল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী উপজেলার মহেশপুর ব্র্যাক মোড় এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সকাল থেকেই রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয় ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। দুপুরে পলাশবাড়ী উপজেলার মহেশপুর এলাকার মহাসড়কে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা কলাগাছ ফেলে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফেলে রাখা কলাগাছ সরাতে গেলে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া করে। পরে পুলিশও তাদের পাল্টা ধাওয়ার করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
বগুড়া ঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকে অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে বগুড়ার সড়ক ও মহাসড়কে কোচ, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ ভারী যানবাহন চলাচল করেনি। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলেনি। এ কারণে দূরের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে শহরে রিকশা, অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহন চলাচল করেছে। জীবনযাত্রা ছিল অনেকটা স্বাভাবিক।
এদিকে, অবরোধের সমর্থনে সকালে বগুড়া শহরের মাটিডালি বাইপাস সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপিসহ ২০ দলের নেতাকর্মীরা। পরে তারা সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন চান প্রমুখ
পুলিশ নাশকতাবিরোধী অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ ৩৮ জনকে আটক করেছে। শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা ছিল। এছাড়াও মোড়ে মোড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
কুমিল্লা : কুমিল্লার আলেখারচর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে। এছাড়া জেলার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় অবরোধকারীরা মহাসড়কে যাতায়াতের সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বেশ কয়েকটি মালবাহী ট্রাক ও ১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাংচুর করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর এলাকায় সকাল থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির এককর্মী ইট নিক্ষেপ করে একটি ট্রাকের কাচ ভাংচুর করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ নিয়ে একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া মহাসড়কের জেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৮/৯টি মালবাহী ট্রাকে ও সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় ভাংচুর চালায় অবরোধকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে।
বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশ সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৩ নেতাকর্মীসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলা পুলিশ অফিস জানায়, নাশকতা কর্মকা-ের অভিযোগে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ সোমবার রাতে অভিযান করে উপজেলার বারুইখালী এলাকার গুনি কাজীর ছেলে পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি বাচ্চু কাজী (৪৫), বিএনপিকর্মী একই এলাকার আনোয়ার পিয়নের ছেলে সোহেল হাওলাদার (২৫) ও পুর্ব-সরালিয়া এলাকার মোবারক শেখের ছেলে মিরাজ শেখকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অন্য থানা পুলিশ বিভিন্ন ঘটনায় আরো ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সহোদর ৪ ভাইসহ বিএনপি-জামায়াতের ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে পুলিশ সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন_ উপজেলার পশ্চিম শিবরাম গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৪৫), বাবলু মিয়া (৪২), আনোয়ার হোসেন (৪০) ও আমজাদ হোসেন (৩৮), তালুক সর্বানন্দ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫০), গোপাল চরণ গ্রামের ডা. সোলায়মানের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৮), দহবন্দ গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে খয়বার হোসেন (৪৫), কালিরখামার গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮)।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও এলাকায় নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতে রূপগঞ্জ জুড়েই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ জানুয়ারি রাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো_ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৬নং ওয়ার্ডের সৈয়দ রহমানের ছেলে কুদ্দুস ভা-ারি (৪২), সোয়াব আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩২), ৮নং ওয়ার্ডের ইকবাল মোল্লার ছেলে আরিফুল ইসলাম (২০), বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিল (৩০), ১নং ওয়ার্ডের ইকবাল মোল্লার ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৬)।
গাংনী (মেহেরপুর) : মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশ সোমবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে ৭ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে। আটককৃতদের মেহেরপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন- গাংনী উপজেলার ছাতিয়ানের সাইদুর রহমান (৩১), হাড়াভাঙ্গার তোহিদুল ইসলাম (৩৫), সাবেহনগর গ্রামের মোনতাছুরুল (৩৫), ইউনুছ আলী (২৭), আনোয়ার হোসেন (৩০), কাজিপুর গ্রামের জুল হোসেন (২৫) ও গাড়াডোব গ্রামের আব্দুস সালাম (২৭)।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) : বড়াইগ্রাম উপজেলায় সোমবার রাতে নাশকতায় জড়িত অভিযোগে আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবদল নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। আটক আমিনুল ইসলাম উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং আহম্মেদপুর নওপাড়া গ্রামের মৃত কাজী আব্দুল মোতালেবের ছেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *