দিল্লি সহিংসতা : ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি সাংবাদিকরা

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব

ভারতের দিল্লি সহিংসতায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে উগ্রবাদি হিন্দুদের দ্বারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। কোথাও কোথায় হুমকির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত নামে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ একজন সাংবাদিক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমে। তিনি কারোয়াল নগর একটি বেকারির সামনে দাঁড়িয়ে বেকারি মালিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় একদল উন্মত্ত জনতা রাজপুরোহিতকে ঘিরে ফেলে। চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি হঠাই প্রশ্ন করেন ‘কে আপনি?’ রাজপুরোহিত নিজেকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি সাংবাদিককে তাঁর নোটবুক দেওয়ার জন্য বনে। নোটবুক হাতে পেয়েই সন্দেহজনক কিছু রয়েছে কিনা চলে খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু কয়েকটি ফোন নম্বর ও গুটি কয়েক পর্যবেক্ষণের কথা ছাড়া নোটবুকে কিছুই মেলেনি। তারপরই চড়া সুরে বলা হয়, ‘আপনি এখান থেকে কিছু রিপোর্ট করতে পারবেন না।’ নোটবুকটি ফেরৎ না দিয়ে তা সোজা আগুনে ফেলে দেওয়া হয়।

পূর্ব দিল্লিতে এখন এই ধরনের হুমকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে। একটু এগোতেই আবারও রাজপুরোহিতকে ঘিরে ধরে ৫০ জনের একটি দল। দেখতে চাওয়া হয় মোবাইল ফোন। আসলে তারা মনে করছিল যে মোবাইলে হিংসার ছবি তোলা হয়েছে। হিংসার কোনও ছবি দেখতে না পেলেও মোবাইলের বাকি সব ছবিও বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপরই সাংবাদিক রাজপুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘কেন আপনি এখানে এসেছেন? আপনি কী জেএনইউ-র থেকে এসেছেন?’ এরপর সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় সাংবাদিককে।

এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রায় ২০০ মিটার দিরে রাখা বাইকের দিকে সবে এগোতে শুরু করেছেন ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত। ফের একদল লাঠিধারীর সামনে পড়তে হয় তাঁকে। কেউ কেউ বলতে থাকে মোবাইলে ছবি তোলা হয়েছে। মুখ ঢাকা এক যুবক সাংবাদিককে তাঁর মোবাইল দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। রাজপুরোহিত তখন বলেন, ‘মোবাইল থেকে সব ডিলিট করা হয়ে গিয়েছে।’ যা বলতেই চড়া সুরে ফের বলা হয়, ‘ফোন দে’। এরপরই যুবকটি সাংবাদিকের পিছনের দিকে গিয়ে দু’বার তাঁর পায়ে রডের বাড়ি মারে। সাংবাদিক রাজপুরোহিতের কথায়, ‘তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বলা হয় আমার কাছে কোনটা বেশি জরুরী, জীবন নাকি মোবাইল। আমি মোবাইলটা বার করে ওদের হাতে দিতেই চিৎকার করতে করতে ওরা চলে যায়’।

এখানেই শেষ নয়। এরপরও আরও একদলের মুখোমুখি হতে হয় সাংবাদিক রাজপুরোহিতকে। তিনি বলেন, ‘বছর ৫০-র এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে আমার চশমা খুলে নিল। এরপরই দু’বার থাপ্পর মারলো। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা থেকে রিপোর্টিংকরা জন্য এই পরিণতি। এরপরও ওরা আমার প্রেস কার্ড দেখল। যা দেখে বলল, হুম- তুমি হিন্দু? বেঁচে গেলে। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি। আমি প্রকৃত হিন্দু কিনা তার আরও প্রমাণ দাবি করা হয়। বলতে বলা হয়- জয় শ্রীরাম। তবে আমি নীরবই ছিলাম।’

এরপরই সাংবাদিককে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু, জটলার মধ্যে থেকেই কেউ একজন বলে, ‘আরও একটি ভিড় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।’ সাংবাদিক রাজপুরোহিতের ব্যাখ্যায়, ‘আমি বাইকে চাপতেই বলা হয় তাড়াতাড়ি পালাও। কোনও মতে সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে বেরিয়ে আসি। ’

অন্যদিকে বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, সাংবাদিকসহ অনেকেই টুইট করেছেন এই বলে যে হামলাকারীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। একজন ফটো সাংবাদিক বলেছেন, তাকে তার প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।

এদিকে গত সোমবার থেকে দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে দিল্লিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গুলিবিদ্ধসহ ২৫০ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *