বিবিসির রিপোর্ট: মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে দিল্লিতে

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব

সহিংসতায় টগবগ করে ফুটছে ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন এলাকা। এরই মধ্যে সেখানে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দাঙ্গা পরিস্থিতি। অনেক মুসলিমের বাড়িঘর, দোকানপাট টার্গেট করা হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে এত ভয়াবহ সহিংসতা ঘটেনি। নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে রোববার প্রথম সংঘর্ষের সৃষ্টি। তারপর থেকে তা আস্তে আস্তে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
পরিস্থিতিকে ‘এলার্মিং’ উল্লেখ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেনা নামানোর অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তা সাম্প্রদায়িকতার পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে ধর্মের ওপর ভিত্তি করে লোকজনের ওপর হামলা হচ্ছে।

বিবিসির স্থানীয় একজন সাংবাদিক দেখতে পেয়েছেন একটি মসজিদ আংশিক পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে ধর্মীয় গ্রন্থের কিছু পৃষ্ঠা। একই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তাতে ওই শহরটির একটি হিম শীতল রূপ ধরা পড়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দলবদ্ধভাবে লাঠি, লোহার রড এবং ইটপাথর হাতে লোকজনকে দেখা গেছে রাস্তায়। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে হিন্দু ও মুসলিমরা। তবে বুধবার নতুন করে কোনো সংঘর্ষের রিপোর্ট পাওয়া যায় নি। কিন্তু দিল্লিতে উত্তেজনা অব্যাহত আছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা যেমন মৌজপুর, মুস্তাফাবাদ, জাফরাবাদ ও শিববিহারে অস্থিরতা বেশি।

ঘটনাস্থলে বিবিসির সাংবাদিক বলেছেন, এসব এলাকার প্রধান সড়কগুলো বিশৃংখল অবস্থায়। রাস্তায় বিক্ষিপ্ত পড়ে আছে ইটপাথর, ভাঙা কাচ, ভাঙা ও পুড়ে যাওয়া গাড়ি এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনেক ভবনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছিল ধোয়া। এসব বলেছেন বিবিসি হিন্দির সাংবাদিক ফয়সাল মোহাম্মদ। তিনি বলেছেন, আংশিক পুড়ে যাওয়া একটি মসজিদ দেখতে পেয়েছেন তিনি। এর মেঝেতে পড়ে ছিল ধর্মীয় গ্রন্থের কিছু পৃষ্ঠা।

এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তার মধ্যে রয়েছেন হিন্দু ও মুসলিমরা। গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মতে, সেখানে আহত প্রায় ১৮৯ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। বিবিসির সাংবাদিকরা হাসপাতালে দেখতে পেয়েছেন বিভিন্ন রকম আহত মানুষকে। তাদের কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ। চিকিৎসার জন্য চিৎকার করছেন তারা। তারা বলছেন, ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগি গিয়েছেন সেখানে। আহতদের অনেকে এতটাই ভীত শঙ্কিত যে তারা বাসায় যেতেও ভয় পাচ্ছেন।

এই এলাকাগুলো লোনি সীমান্তের কাছাকাছি। এই সীমান্ত দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের মধ্যে বিদ্যমান। বর্তমানে ওই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এলাকার স্কুল বন্ধ রয়েছে। বছর শেষের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। সাংবাদিক সহ অনেকে টুইট করেছেন এবং মুখে বলেছেন, দাঙ্গাকারীরা তাদের কাছে তাদের ধর্ম কি তা জানতে চেয়েছে। কমপক্ষে একজন সাংবাদিক বলেছেন, তাকে তার ধর্মীয় পরিচয় দেয়ার জন্য প্যান্ট খুলতে বলা হয়েছিল। অতীতেও ধর্মীয় দাঙ্গার সময় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে মুসলিমদেরকে চেনার জন্য। কারণ, মুসলিমদের মুসলমানি করানো থাকে।

সংবাদ ভিত্তিক নিউজ চ্যানেল এনডিটিভিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেছেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত ফোর্স আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ সময় তিনি দিল্লিবাসীকে ইউনিফর্ম পরা মানুষগুলোর প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান। হামলার সময় পুলিশ পর্যাপ্ত ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। এমন অভিযোগের জবাবে অজিত দোভাল ওই কথা বলেন। এ ছাড়া অপ্রস্তুত থাকার এবং সংখ্যায় কম থাকার অভিযোগ আছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। এই সহিংসতায় কমপক্ষে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রতন লাল নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। ওদিকে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের মুখপাত্র এমএস রাধাওয়া বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী।

ওদিকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বুধবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক বসেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে কর্মকর্তা ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সহিংসতার এই সময়কে তার জন্য বিব্রতকর হিসেবে দেখা হয়। কারণ, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দু’দিনের জন্য ভারত সফরে অভ্যর্থনা দিচ্ছিলেন সেই সময়েই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সহিংসতা মারাত্মক রূপ নেয়ায় তা ট্রাম্পের সফরকে টপকে যায়। দিল্লির এ সহিংসতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সংবাদ শিরোনাম হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *