তারেকের স্বীকারোক্তি: আরিফ ও রানা দায়ী

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ রাজনীতি সারাদেশ সারাবিশ্ব

47368_Tarek-Sayed
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা:
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম

নারায়ণগঞ্জ: সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চাকুরীচ্যুত র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক অবসরে পাঠানো সেনাবাহিনীর লে. কর্ণেল তারেক সাঈদ সহকমী আরিফ ও রানাকে দায়ী করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

জবানবন্দীতে তিনি পুরো ঘটনার জন্য মেজর (অবসরে পাঠানো) আরিফ হোসেন ও এম এম রানাকে দায়ী করেছেন। তবে এতে তিনি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

৬ দফায় ৩২ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার সকাল ১১ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের খাস কামরায় সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দী শেষে বিচারক তারেক সাঈদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে একই আদালতে গত ৪ জুন আরিফ হোসেন ও পরদিন ৫ জুন এম এম রানা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এতে নিজেদের অপরাধ ও দায় স্বীকার করেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একজন কমকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন হতে তারেক সাঈদকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়। পরে তাকে নেওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে। সেখানে তাকে প্রথমে জবানবন্দী দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার সুযোগ দেওয়া হয়। সকাল ১১টা হতে জবানবন্দী দেওয়া শুরু করেন তারেক সাঈদ।

সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগিকে হত্যার ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা হত্যা মামলায় প্রথমে জবানবন্দী দেন তারেক সাঈদ।

পরে তারেক সাঈদ সাত খুনের ঘটনায় নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালক হত্যার ঘটনায় চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় পালের দায়ের করা মামলায় জবানবন্দী দেন।
জবানবন্দীতে কী উল্লেখ করা হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রিমান্ডে থাকার সময় তারেক সাঈদ বার বার হত্যাকান্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খাসকামরায় তারেক সাঈদের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। এতে তিনি বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এস আই আশরাফ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। পরদিন ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ৩০ এপ্রিল বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১  মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল। পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দু’টি করে বস্তায় বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। সাতজনকে অপহরণের পর ২৯ এপ্রিল রাতে সে সময়ের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, র‌্যাব-১১ এর সিইও তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ, ক্রাইম প্রিভেনশনাল স্পেশাল কোম্পানীর কমান্ডার লে. কমান্ডার এমএম রানা, ফতুল্লা থানার ওসি আক্তার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল মতিনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাকে র‌্যাব থেকে চাকুরীচ্যুত এবং পরে সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনীও তাদের অকালীন অবসরে পাঠায়। সেভেন মার্ডারের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গত ১৬ মে দিনগত রাতে ঢাকার সেনানিবাস থেকে আরিফ হোসেন ও তারেক সাঈদকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *