চীন থেকে ফেরা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ৩০ ঘণ্টার যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা

Slider জাতীয় টপ নিউজ

সাত ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করে মালয়েশিয়া হয়ে দেশে ফিরেছেন চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লিওনিং প্রদেশে মেডিকেল পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আকলিমা বখ্‌ত আন্নি। চার বছর ধরে তিনি গণচীনে আছেন। ছুটিতে আসা-যাওয়া করেন নিয়মিত। জার্নিতে তিনি অভ্যস্ত প্রায়। কিন্তু এবারের যাত্রাটা তার বড়ই বিড়ম্বনার, কষ্টের। পথেই তার কেটেছে ৩০টি ঘন্টা। দীর্ঘ যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। পথে পথে ভাইরাস আতঙ্কে অন্তত ৬ দফা তার চেকিং হয়েছে।

রেলস্টেশন, বিমানবন্দর তো বটেই, কফি শপেও তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। জ্বর-কাশি নেই এমনটি নিশ্চিত হওয়ার পরই বেইজিং এয়ারপোর্টের স্টারবার্গস কফি শপ থেকে এক কাপ কফি কিনতে পেরেছেন। আন্নির ভাষ্য মতে, বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে তিনি চীনের লিওনিং প্রদেশের জিনঝু শহর থেকে রওনা করেন। বেইজিংগামী বাস বন্ধ থাকায় তিনি ট্রেন ধরেন।

প্রায় সাত ঘন্টায় রাজধানীতে পৌঁছান। সেখান থেকে কুয়ালালামপুরগামী বিমানে ওঠেন। রাতের ফ্লাইটে মালয়েশিয়ায় পৌছার পর প্রায় চার ঘন্টা ট্রানজিট লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে হয়। মধ্যরাতে ঢাকাগামী ফ্লাইট পান। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। বিমানবন্দরে উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষমাণ ছিলেন তার বাবা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখত। পূর্ব পরিচয়ের সুবাধে মেয়ে পৌছানোর পরপরই প্রতিবেদককে খবরটি জানান তিনি। কথা হয় আন্নির সঙ্গেও। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় আন্নি বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে অসময়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু যাত্রাটা বড়ই কষ্টের হয়েছে।

তারপরও সান্ত্বনা, তিনি পূর্ণ সুস্থতার সঙ্গে বাবা মায়ের কোলে ফিরতে পেরেছে। কেবল আন্নিই নন, তার মতো আরও অনেকে ফিরছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই ক’দিনে অনেকে দেশে ফিরেছে নিজ উদ্যোগে। দেশে থাকা স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই তাদের ফিরিয়ে এনেছে। যদিও তারা চীনের যেসব এলাকায় ছিলেন সেখানে এখনও ভাইরাসটি ততটা আঘাত করেনি। পুরো প্রদেশে এ পর্যন্ত ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে স্থানীয় সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে- করোনার উৎপত্তিস্থল হুবাই প্রদেশের উহানেই ভাইরাসটি একের পর এক আঘাত হানছে। অনেকে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে চীন সরকার উহানকে কর্ডন করে ফেলেছে। শহরটিতে সব ধরনের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ প্রায়। বিমানবন্দরেও ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ রাখা হয়েছে।

অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভুতুড়ে পরিবেশে উহানের বিভিন্ন ডরমিটরি ও বাসাবাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে মানুষজন। চীনে থাকা শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সূত্রে এটা নিশ্চিত যে উহানে সাড়ে ৪ থেকে ৫’শর মত বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন। তাদের বের করে আনতে উহানে বিশেষ বিমান পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলো ঢাকা। কিন্তু চীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দিনের মধ্যে কাউকেই তারা উহানে ঢুকতে বা বের হতে দেবে না। যদিও বেইজিংয়ের ওই ঘোষণার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান বিশেষ বিমান পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। উহান-ভাইরাস আতঙ্কে বিস্তীর্ণ-বিশাল গণচীনের বিভিন্ন প্রদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সতর্কতামূলক পদেক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে অনেক প্রদেশের বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সেখানে নাগরিকরাও নানা রকম সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশিরা গণহারে চীন না ছাড়লেও অনেকে সতর্কতার জন্য নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশীরাও ফিরছেন।

চীনে নিবন্ধন করেছে দেশে ফিরতে চাওয়া ৩৭০ শিক্ষার্থী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, চীনের ২২টি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৩৭০ শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরতে চেয়ে নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের বেশিরভাগই চীনের উহান শহরে আটকা পড়েছেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে যে যদি কোনো বিদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে তার চিকিৎসার সকল ব্যয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি নিজেই বহন করবে। এর আগে ড. মোমেন বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে এবং একটি তালিকা তৈরি করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশি নাগরিকদের উহান শহর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আনা হবে। এরপর বাংলাদেশ তাদের জন্য বাণিজ্যিক বিমান পাঠাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে। তারা কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সরকার অনুমতি দিলেই তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। দেশের ফেরার পর তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *