রাত পোহালেই ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জনমনে। প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এ উদ্বেগ বেড়েছে শেষ মুহূর্তে। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সামনেও এক বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় এবং ভোটে যাতে সবাই অংশ নিতে পারে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সামগ্রিকভাবে ভোট কেমন হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। সুষ্ঠু ভোট হবে এমনটি প্রত্যাশা। লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে সকল পক্ষ (দল) যেন সংযত থাকে। এবং সাধারণ মানুষকে যেন ভোগান্তিতে না ফেলে। ভোটের দিন কি হবে সেটা আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত অনেকের কথাবার্তা উষ্কানিমূলক বলে মনে হয়। কাজেই আমার মনে হয় তাদের সংযত আচরণ করাটাই ভালো। বিশেষ করে সরকারি দলও যাতে সংযত আচরণ করে।
সরকারি দলের একজন নেতা ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই মুহুর্তে এ ধরনের কথা বলার মানে কি ভোটাররা ভোট দিতে পারবে না? এটা একটি বড় প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন যদি ঠিকমত ভোট করাতে না পারে তাদের থাকা না থাকা একই কথা। তারা (ইসি) কিভাবে তাদের ইতিহাস লিখবে এটা তাদের বিষয়। ভোটকেন্দ্র ‘দখল ও নিয়ন্ত্রণে’ করতে যদি কোন নেতা বলে থাকেন তাহলে এটা উনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন। যদি এধরনের কথা তিনি বলে থাকেন তাহলে নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ভোট কেন্দ্র দখলে রাখার প্রকাশ্য ঘোষণা, দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ নির্লিপ্ততা, ঢাকার বাইরের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার পুলিশের ঘোষণা, চতুর্থত, ইদানিংকালের নির্বাচনগুলোর ইতিহাস থেকে খুব বেশি আশঙ্কা হয় এই শনিবারের নির্বাচনও একটি নির্বাচনের নামে আবার প্রহসনের পর্যবসিত হবে। তবে আশা আছে ভোটাররা যদি দলে দলে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার জন্য ভোটকেন্দ্রে যান তাহলেই হয়তো ভালো ভোট হতে পারে। ভোট কেন্দ্র দখলের আহ্বান স্পষ্টতই এটা বেআইনি আহ্বান। এখন ভোটাররা যদি তাদের ভোটাধিকার বিসর্জন দিয়ে ঘরে বসে থাকেন তাহলে তো দেশে কখনোই গণতান্ত্রিক অধিকার আসবে না। এবং ভোটাররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘরে বসে কোনো দেশে ভোটের অধিকার, নাগরিক অধিকার কোনো সমাজ পায়নি। আশা করবো ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে।
কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার কেমন যাবে এটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর উপর। কিরকম আচরণ করবে দলগুলো এবং প্রার্থীরা অনেক কিছু এর উপর নির্ভর করছে। শনিবার দিন নির্ভর করছে আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যারা নিয়ন্ত্রণে রাখে তারা একেবারেই নিরপেক্ষভাবে তাদের কাজ করবে কি না। নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে বিরোধীদলগুলোর পোলিং এজেন্ট থাকবে কি না, নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী একটি ভূমিকা থাকবে কি না, অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তবে আমি আশা করি যেন শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসবমূখর পরিবেশে নির্বাচনটা সম্পন্ন হয়। এবং সেখানে যেন কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ না হয়। এটা আমার প্রত্যাশা। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র ‘দখল ও নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বানের অভিযোগটি যদি সত্য হয়, তাহলে এটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। এটা হওয়া উচিৎ নয়। এবং এটা কোনো ক্রমেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এবং এটা নির্বাচন আচরণ বিধিরও লঙ্ঘন।