ডেস্ক:অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস। শত চেষ্টা সত্ত্বেও চীনের বাইরে ভাইরাসটির বিস্তার থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন নতুন কোনো দেশে এর অস্তিত্ব ধরা পড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ গেছে ১৩২ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অবশ্য এখনো মহামারিটিকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেনি। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এর আতঙ্ক সুসপষ্ট হয়ে ওঠেছে।
দেশে দেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চীনকে একপ্রকার একঘরে করে দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ও এর নিজের একাধিক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
স্থানীয় গণমাধ্যম অনুসারে, বিমানে চীন ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার কথা চিন্তা করছে হোয়াইট হাউস। ইতিমধ্যে একাধিক বিমান সংস্থা চীনে তাদের ফ্লাইট সীমিত করে দিয়েছে। এর মধ্যে দুই মাসের জন্য দেশটিতে ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে বৃটিশ এয়ারওয়েজ। চীন সরকারও উৎপত্তিস্থল উহানকে অনেকটা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। চীনে আটকে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে অন্যান্য দেশ। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ইতিমধ্যেই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। এ ছাড়াও কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, নেপাল, জার্মানি, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ অন্তত ১৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। দ্রুত সংক্রমণ ঘটা ও কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব এটিকে যমদূতের রূপ দিয়েছে। মূলত চীন ফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই দেশে দেশে এর বিস্তার ঘটছে। তবে চীনা সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। জাপানে পর্যটকবাহী এক বাস চালকের মধ্যে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। এদিকে, বিশ্বজুড়ে গবেষকরা রোগটি প্রতিরোধে চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে একদল গবেষক জানিয়েছেন, কেউ আক্রান্ত হওয়ার আগেই তা শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ভাইরাসকে ‘ডেভিল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, চীন এই ভাইরাসকে পরাজিত করবে। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে আছে একটি সামুদ্রিক খাবারের মার্কেট। সেখানে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণীর কেনাবেচা হয়। সেখান থেকেই এই ভাইরাসের বিস্তার বলে মনে করছেন অনেকে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তার দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এ পরিকল্পনায় উদ্ধার হওয়া নাগরিকদের ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এমন ঘোষণায় তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, ওই আইল্যান্ড বা দ্বীপটি অভিবাসীদের বন্দিশিবির হিসেবেই বেশি পরিচিত। সেখানে যারা বন্দি আছেন তাদের অবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কড়া সমালোচনা আছে। ওই দ্বীপে কমপক্ষে ১০০০ মানুষকে ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য। কিন্তু সেখানে এখন শুধু একটি পরিবারই অবস্থান করছে। এ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। অস্ট্রেলিয়া যখন তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করবে তখন নিজেদের ৫৩ জন নাগরিককে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে উদ্ধার করে নেয়ার জন্য ক্যানবেরাকে সহযোগিতা করবে নিউজিল্যান্ড।
জাপান
এরই মধ্যে উহান থেকে বিমানযোগে উড়াল দিয়েছেন প্রায় ২০০ জাপানি নাগরিক। তারা এরই মধ্যে রাজধানী টোকিও’র হানেডা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। এর বাইরে রয়েছেন আরো ৬৫০ জন অভিবাসী। তারাও চাইছেন, তাদেরকে উদ্ধার করা হোক। জবাবে জাপান সরকার বলেছে, তারা উদ্ধার অভিযানের জন্য নতুন ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। জাপানের মিডিয়ার মতে, যেসব নাগরিক দেশে ফিরে গেছেন তাদের অনেকেই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। ফেরত যাওয়া সব নাগরিককে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে হাসপাতালে, তাতে তাদের কোনো সমস্যা থাক বা না থাক। হাসপাতাল থেকে তাদের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। বিচ্ছিন্ন করে ফেলা একটি ওয়ার্ডে তাদের পরীক্ষা করার কথা রয়েছে। এরপরই যার যার বাড়ি যেতে দেয়া হবে। তাদেরকে বলে দেয়া হবে, তারা যেন পরীক্ষার ফল না জানা পর্যন্ত বাসা থেকে বের না হন।
যুক্তরাষ্ট্র
বুধবার প্রায় ২০০ মার্কিন নাগরিক উহান শহর ছেড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের কিছু কর্মী ও মার্কিন নাগরিক। সিএনএন বলছে, যাদেরকে উদ্ধার করা হবে তাদেরকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে। ওদিকে ২০০ বৃটিশ নাগরিককে উদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু দেশে ফেরার পর সরকারি সমর্থনের অভাব থাকার অভিযোগে বৃটিশ অনেক নাগরিক সরকারের সমালোচনা করেছেন। আলাদাভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিকদের দুটি বিমানে করে উদ্ধার করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ফ্লাইটে উহান ছাড়ার কথা রয়েছে ২৫০ ফরাসি নাগরিকের। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, এ সপ্তাহে চারটি ফ্লাইটে তাদের ৭০০ নাগরিককে উদ্ধার করা হবে।