পেটানোর পর উল্টো নুরদের বিরুদ্ধে মামলা

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নজিরবিহীন হামলার শিকার ভিপি নুরুল হক নুর ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এবার হত্যাচেষ্টা ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ভিপি নুরসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া আরও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মী ডিএম সাব্বির হোসেন। বাদী সাব্বির হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামিদের ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে। হামলাকারীদের মদতে তিনি এ মামলা করেছেন বলে গতকাল ক্যাম্পাসে আলোচনা ছিল। মামলার বাদী যাদের পক্ষ নিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ছিনতাইয়ের মামলা করেছেন তাদের ৮জনই পুলিশের করা মামলার আসামি। ডিএম সাব্বির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি।
তিনি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। এছাড়াও সাব্বির মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সদ্য সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের আস্থাভাজন। তাদের দু’জনের বাড়িই গোপালগঞ্জ। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে বুলবুল সাব্বিরকে দিয়ে মামলাটি করিয়েছেন। আর আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছাত্রলীগের অব্যহতি প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী। অভিযোগ আছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আর্থিক যোগানদাতাও গোলাম রাব্বানী। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ডাকসুতে গত রোববার হামলার পিছনে রাব্বানীর ইন্দন ছিল।

মামলার অভিযোগে ডিএম সাব্বির বলেছেন, গত ২২শে ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৩৫ থেকে ৪০ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে টেলিনরের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর উকিল নোটিশ প্রদানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সাড়ে ১২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিুনল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। ওই সময় বাদী ডিএম সাব্বিরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনসহ আরও ৩০/৩৫ জন নেতাকর্মী স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে পৌঁছায়। সেখানে ডাকসু ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মী ও ডাকসু ভিপি নুরসহ তার ৪০ থেকে ৫০ জন অনুসারীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে নুর কেন উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিল সেটি জানার জন্য সনজিত ও সাদ্দাম নুরের কাছে যায়। তখন নুরসহ তার অনুসারিরা সনজিত ও সাদ্দামের উদ্দেশে ফের উসকানিমূলক স্লোগান দেয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করতে উদ্যত হয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় আসামি নুরসহ ২৯ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জন তাদের হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় তারা তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ ও হাতঘড়ি চুরি করে নিয়ে যায়। বহিরাগত আসামিরা লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ ৮ জন গুরুত্‌র জখম হন।হামলায় ১৫ থেকে ২০ জন দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এপিএম সোহেল, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান, আবু হানিফ, আমিনুল ইসলাম, ধানমণ্ডি চাটার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তুহিন ফারাবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসিম উদ্দিন হলের মেহেদি হাসান, একই হলের ছাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত, নাজমুল হাসান, আয়াতুল বেহেশতী, রবিউল হোসেন, আরিফুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ও আরিফুর রহমান, এ এফ রহমান হলের বিন ইয়ামিন মোল্লা, একই হলের তরিকুল ইসলাম, আকরাম হোসেন, মুহসীন হলের আব্দুল্লাহ হিল বাকি, একই হলের শাকিল মিয়া, বিজয় একাত্তর হলের আসিফ খান, একই হলের হাসানুল বান্না, রবিউল ইসলাম, জিয়া হলের সানাউল্লাহ হক, শহিদুল্লাহ হলের আতাউল্লাহ, রাজ, আরিফুল ইসলাম। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মারামারির ঘটনায় ভিপি নুরুল হকসহ নাম উল্লেখ করে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ঢাবির শিক্ষার্থী ডি এম সাব্বির উদ্দিন। এছাড়া আরো ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে এ মামলায়। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে গত ২২শে ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে হামলার শিকার হন ভিপি নুর ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভিপির কক্ষে প্রবেশ করে বাতি নিভিয়ে সেখানে থাকা সবাইকে মারধর করে। দুজনকে ওপর থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৩১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। সুস্থ হয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ভিপি নুরসহ আছেন ৮ জন। পরদিন ২৩ ডিসেম্বর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এসআই রইচ হোসেন ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সঙ্গীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত ত্থর্যসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে আল মামুন ও তুর্যসহ তিনজনতে গ্রেপ্তার করে ডিবি রিমাণ্ডে নিয়েছে। পরদিন ২৪ ডিসেম্বর নিজের ও সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের ৩৭ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছিলেন নুরুল হক নুর। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে আরও ৪০/৫০ জনকে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভিপি নুরের পক্ষে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ: এদিকে ডাকসুতে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল দুপুরে তারা এই বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় তারা ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার ও সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবি জানান। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দুপুর ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ বের করে জোটের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে ডাকসু, লাইব্রেরী থেকে ভিসি ভবনে যান। এসময় তারা হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রগতিশীল জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বমন্বয়ক আল কাদেরী জয় বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। তারা হলে সিট দখল, ছিনতাই, হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন আগে ডাকসু ভিপির উপরও তারা হামলা করে। এ ঘটনায় ত্রিশ জনের মতো আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের যারা এ হামলায় জড়িত ছিল তাদের সবাইকে অতি বিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাই। না হলে ছাত্রসমাজকে নিয়ে দুর্বর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তালা ভেঙ্গে গায়েব করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ, এখনও হদিস মেলেনি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ মিলছে না। ডাকসু ভবনের সিসিটিভির মনিটর ও সিপিইউ উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। ডাকসুতে রয়েছে ৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এই ক্যামেরাগুলো পরিচালিত হয় ডাকসুর জেষ্ঠ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কক্ষ থেকে। হামলার পর থেকে কোনো ক্যামেরার ফুটেজই পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফুটেজ দেখেই জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। ফুটেজ উদ্ধার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে কিন্তু ফুটেজ মিলছে না। ফুটেজ কাদের কাছে এ বিষয়েও কোনো তথ্য নেই তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্রথমে হামলাকারীরা নিচে জড়ো হতে থাকে। কিছু সময় পর তারা ইট পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। এরপর তারা প্রবেশ করে ভিপির কক্ষে। সেখান থেকে চিৎকার শোনা যায়। বাইরে তখন লাঠি শোঠা হাতে অবস্থান নেয় হামলাকারীদের একাংশ। তারা বাইরে থাকা ভিপি নুরের সহযোগীদের পেটাতে থাকেন। তিনি আরো বলেন, কিছু সময় পর হামলাকারীরা বলতে থাকে সিসিটিভি কই? তারা খুঁজতে থাকে সার্ভার রুম। এরপর সার্ভার রুমের দিকে গেলে দেখতে পায় সেটি তালাবদ্ধ। পরে তালা ভেঙ্গে সিসিটিভি সার্ভার, মনিটর ও সিপিইউ নিয়ে যায় তারা।

সরজমিনে দেখা গেছে, ভিপির কক্ষের দরজার ঠিক ওপরে একটি সিসি ক্যামেরা। ঠিক সিঁড়ির ওপরে আরেকটি ক্যামেরা যেখান থেকে দেখা সম্ভব কে কে প্রবেশ করেছিল। সেখানে দেখা গেছে তাণ্ডবের চিত্র এখনও স্পষ্ট।
আরেকজন জানান, হামলার পর চলে যাওয়ার সময় তিন জনের কাছে ছিলো সিপিইউ সদৃশ কিছু একটা। তবে এটি সিপিইউ ছিলো কিনা তিনি নিশ্চিত নন। এই তিন জনকে সবাই বলেন, সাবধানে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, তারা তিনজন এটি নিয়ে ডাকসুর পিছনের সড়কের দিকে যায়। এরপর সেখানে থাকা সাত থেকে আট জন দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে যায়। একদল যায় লাইব্রেরির দিকে। আর একদল যায় অপরাজেয় বাংলার দিকে।

ডাকসুর জেষ্ঠ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, হামলার পর বিষয়টি জানাতে আমি প্রক্টরের কাছে যাই। এরপর যাই কোষাধ্যক্ষের কাছে। ফিরে এসে দেখি আমার কক্ষের তালা ভাঙ্গা। মনিটর ও সিপিইউ নেই।
ফুটেজ উদ্ধার করতে মাঠে নেমেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ফুটেজ কোথায়? কারা নিয়ে গেছে? এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইতিমধ্যে ফুটেজের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদসহ প্রত্যক্ষদর্শী অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার পরপরই একটি গ্রুপ সিসি টিভির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ঢুকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েক জন তাদের বাধা দিলে হামলাকারীরা তাদের ধমক দেয়। এমনকি প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিলো। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের পরিচয় জানা গেলেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাচ্ছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ডিবি পুলিশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হাসান আরাফাত বলেন, ফুটেজ কোথায় আছে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হলে তাৎক্ষণিকভাবেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

ফুটেজ গায়েবের দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের: ডাকসু’র ভিপি নুরুল হক নুর ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। হামলার পরপরই সিসি টিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে। নুরের ওপর এই হামলাকে অত্যন্ত বর্বর ও ছাত্র সমাজের জন্য কলঙ্কময় বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসু’র সাবেক কয়েকজন ভিপি। তারা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের সঙ্গে এক হয়ে ফুটেজ গায়েব করেছে। যাতে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হয়। তারা অবিলম্বে এই হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। অপরাধীদের রক্ষা করতেই সিসি টিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে জানিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা গায়েব করার উদ্দেশ্য হলো যারা প্রকৃত অপরাধী এবং নুরকে আহত করেছে তাদের যাতে পরিচয় সনাক্ত না হয়। আমি অবশ্যই আশা করবো আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম যাতে নষ্ট না হয়, বর্তমান ছাত্রনেতারা সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভিডিও ফুটেজ যদি পাওয়া না যেত তাহলে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা সম্ভব হত না। ফলে এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা প্রয়োজন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ খারাপ হলে সারা দেশেরই পরিবেশ খারাপ হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে। তিনি বলেন, একসময় আমরাও ডাকসু’র ভিপি ছিলাম। এটা একটি সম্মানের জায়গা। ডাকসু ভিপি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রের প্রতিনিধি। আমাদের সময়ও মত এবং পথের ভিন্নতা ছিল। কিন্তু আমরা সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে কাজ করেছি। এই যে বারবার নুরের ওপর হামলা হয় এটা দেশবাসী ঘৃণার চোখে দেখে। এতে আমরা খুব লজ্জিত বোধ করি। এটা অনাকাঙ্খিত। এটা আমরা যেমন গ্রহণ করতে পারি না, একইভাবে বাংলাদেশের মানুষও গ্রহণ করতে পারে না। ফলে নুরুল হক নুরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যারা এটা করে মানুষ তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে।

হামলার সিসি ফুটেজ গায়েব করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহায়তা করেছে দাবি করে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডে যে ঘটনা ঘটেছে এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে। পার্থক্য হচ্ছে আবরার মারা গেছে আর নুর মারা যায়নি। এতবড় ন্যাক্কারজনক ঘটনা যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর করে তাহলে ছাত্ররা কোথায় যাবে। এই সরকারের দশ বছর ক্ষমতায়, শিক্ষার-শিক্ষকতার মান, নৈতিকতা ও চরিত্র এতই অধপতন হয়েছে যেটা প্রকাশ করার অযোগ্য। প্রক্টর নিজে জড়িত সিসি টিভি ফুটেজ গায়েবে। পুরো ঘটনার কথা বলতে গেলে এগুলো পাকিস্তান আমলের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এটা এ্যটেম্প টু মার্ডার। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বিনা উস্কানিতে সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। ছাত্রসমাজের প্রতিবাদের ভাষাকে দমন করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, ডাকসু ভিপি নুরের ওপর হামলার বিষয়টি দুঃখজনক, লজ্জাষ্কর এবং অমানবিক। এটা সমগ্র ছাত্র সমাজের জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমান বলেন, ডাকসু’র ভিপি নুরের ওপর হামলা গোটা ছাত্র সমাজের ওপর হামলা। গণতন্ত্রের ওপর হামলা। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মানবাধিকার হরণ করেছে। ভিপি নুরুল হক সেই হারানো গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা, ছাত্র সমাজের স্বার্থরক্ষার কথা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলে। যার জন্য তার ওপর এ পর্যন্ত নয় বার হামলা হয়েছে। অতএব এই হামলা কোনো স্বাভাবিক হামলা না। যেহেতু ৬২’এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’এর আন্দোলন, ৬৯’এর গণঅভুর্থান ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ ৯০’এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে। অতএব এই ডাকসু যাতে আগামীদিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নেতৃত্ব না দিতে পারে এবং ছাত্র সমাজের পক্ষে কথা বলতে না পারে এজন্য বর্তমান ডাকসুকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে আজকের এই হামলা। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দোষীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ যেটা পাওয়া যাচ্ছে না, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ভিসি এবং প্রক্টরের সঙ্গে ছাত্রলীগ একাত্ম হয়ে এই ভিডিও ফুটেজ গায়েব করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *