পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে যাতে রোগীদের হয়রানি ও পকেট কাটা না হয়

Slider জাতীয় সারাদেশ


রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয় সেদিকে সজাগ থেকে এ ধরনের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন,প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে। তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে যাতে রোগীদের হয়রানি ও পকেট কাটা না হয়। চিকিৎসকদের আরো একটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজারে আসতে না পারে। গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স ‘বাংলাকার্ডিও-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল চিকিৎসা ও রোগীকে হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের খবর বের হয়। রাজধানীর নামিদামি ক্লিনিক থেকে শুরু করে মফস্বলের কিছু ক্লিনিক এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আবার কিছু ডাক্তারের অপকর্মের দায় চিকিৎসক সমাজের উপর পড়ে।

এতে ডাক্তার- রোগীর আস্থার সম্পর্কে ফাটল ধরে। এসব ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে এবং দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে রোগীদের সচেতন করতে চিকিৎসকদের আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট। দেশে হৃদরোগের চিকিৎসা মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার উপায় খুঁজতে সম্মেলনে অংশ নেয়া চিকিৎসকদের আহ্বান জানান তিনি। দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হৃদরোগ চিকিৎসার আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তবে তা রোগীর সংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়।

হৃদরোগ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ভাবতে হবে কীভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার ব্যয়ভার রোগীর সাধ্যের মধ্যে আনা যায়। সরকার দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে হৃদরোগ চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি স্থাপনের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের নিকট হৃদরোগ চিকিৎসা আরও সহজলভ্য করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, চিকিৎসা একটা মহৎ পেশা। চিকিৎসকরা হচ্ছেন মানুষের বিপদের দিনের বন্ধু। কারণ, মানুষ বিপদে না পড়লে চিকিৎসকদের কাছে আসে না। চিকিৎসা এমনই একটা পেশা যেখানে অর্থ, যশ, সম্মান ও মানব সেবার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। তাই আপনারা এই সুযোগের অপব্যবহার করবেন না। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার আর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্রুত পরিবর্তন আসছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন হচ্ছে।

তাই চিকিৎসকদেরকে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে সবসময় অবহিত থাকতে হবে। ডাক্তার হিসেবে আজকে আপনাদের যে অবস্থান তাতে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবকদের পাশাপাশি এ দেশের সাধারণ মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তাই তাদের কথা ভুলবেন না। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ব্যবহারে লোকবল কম থাকায় সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দেশে আধুনিক চিকিৎসা প্রবর্তনে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক সময় হাসপাতালে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার মত জনবল থাকে না। থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে, একদিকে জনগণের টাকার অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি এ কে এম মহিবুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এন সি নন্দ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *