বিবিসির রিপোর্ট ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ, ভারতে নিহত ৩

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ


ডেস্ক: নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভারতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাজারো মানুষকে। অনলাইন বিবিসি এ খবর দিয়ে বলছে, ম্যাঙ্গালোরে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দু’জন। সেখানে একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল বিক্ষোভকারীরা। আরেকজন নিহত হয়েছেন লক্ষেèৗতে। বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাজধানী দিল্লির অংশ বিশেষে, পুরো উত্তর প্রদেশ ও কর্নাটকে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেসব স্থানে গতকাল বিক্ষোভ করেছে জনগণ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।

কিন্তু এ আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিরোধী। এর মধ্য দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। কারণ, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনে শুধু মুসলিমদের বাদ রাখা হয়েছে। তাদের যুক্তি নাগরিকত্ব নির্ধারণে শুধু ধর্মবিশ^াসকে ভিত্তি করা উচিত নয়। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বহু বলিউড তারকা। কিন্তু সমালোচক, সচেতন মহলের এই উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেছেন, বিরোধীরা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আইনটি হওয়ার আগে থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। বিক্ষোভের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক আহ্বান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিবিসি আরো লিখেছে, বৃহস্পতিবার একসঙ্গে চার জনের বেশি মানুষকে একত্রিত হওয়ার ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সারা দেশের বিভিন্ন শহরের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। এদিন ম্যাঙ্গালোরে একটি পুলিশ স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগের চেষ্টাকালে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে সেখানে নিহত হন দু’জন। সেখানকার কমিশনার ড. পিএস হর্ষ সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই শহরে কারফিউ বহাল রয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ঘোষণার আগে তিনি ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ৪৮ ঘন্টার জন্য ম্যাঙ্গালোরে ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুর দিকে লক্ষেèৗতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংস সংঘাত হয়। সেখানে নিহত হয়েছেন একজন। ওই শহরে আহত হয়েছেন এক ডজনের বেশি পুলিশ। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১২ জনকে।
ওদিকে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ, রাজনৈতিক দলগুলো, ছাত্রছাত্রীরা, অধিকার কর্মী ও সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে ম্যাসেজ দিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। এতে জনগণকে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন প্রথম সারির ইতিহাসবেত্তা ও সরকারের সমালোচক রামচন্দ্র গুহ, রাজননৈতিক কর্মী যোগেন্দ্র যাদব। অল্প সময়ের জন্য রামচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয় ব্যাঙ্গালোর শহর থেকে। যোগেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয় দিল্লি থেকে। বিবিসির নিউজআওয়ার প্রোগ্রামে রামচন্দ্র গুহ বলেছেন, বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের কয়েক শত মানুষের সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ‘এতে পরিষ্কার হয় যে, ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ বৈষম্যমুলক এই আইনের বিরোধিতা করছে’।
কেন মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি। তারা বলছে, অনেক মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে, এই আইনের অধীনে যদি তারা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারেন। সমালোচকরাও বলছেন, এই আইনটি একটি গোষ্ঠীকে বাইরে রাখার জন্য এবং ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির লঙ্ঘন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি বলছেন, এই আইনে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সহ ভারতীয় নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আইনটির বিরোধিতার জন্য তিনি বিরোধী দলগুলোকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, তারা মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। সসহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে। মিথ্যার একটি আবহ সৃষ্টি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *