খালি পায়ে স্কুলে যাওয়া নিয়ে গবেষণাতেও সফল অভিজিৎ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

ঢাকা:
অনুন্নয়নের পেছনে কোনো মহৎ তত্ত্ব থাকতে পারে না এমনটাই বিশ্বাস করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং তার স্ত্রী এস্তার দুফলো। তাই তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই আস্থা ছিল তাদের।

আর এ আস্থা থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খালি পায়ে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া আর হুপিং কাশি এবং আফ্রিকার বাচ্চাদের স্কুলছুট হওয়ার মধ্যে যোগসূত্র প্রমাণ করতে সফল হয়েছিলেন তারা। খবর এনডিটিভির।

এবছর অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্তার দুফলো এবং মাইকেল ক্রেমার যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য লাঘবে অবদান রাখায় অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন।

ভারতের অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত জানান, কেন আফ্রিকার একটি দেশে পড়ুয়ারা স্কুলে যাচ্ছিলেন না তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তত্ত্বের বদলে অভিজিৎ এবং তার দল একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, খালি পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হত বলে শিশুদের মধ্যে হুপিং কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

গবেষকরা শিশুদের দুটি দল গঠন করেছিলেন। একটি দলকে জুতো দেওয়া হয়েছিল, অন্য দলটি খালি পায়েই স্কুলে যেত। গবেষণায় দেখা যায়, জুতো পরে স্কুলে যাওয়া শিশুদের হুপিং কাশি হয়নি, বরং তারা আরও স্বাস্থ্যবান হয়েছে এবং স্কুলে পড়াশোনা করতেও গিয়েছে।

দীপঙ্কর আরও বলেন, এটি একটি উদাহরণ যেখানে কোনো তত্ত্বের প্রয়োজন হয় না এবং সমাধানটিও খুব সহজ।

দীপঙ্কর জানান, অভিজিৎ ব্যানার্জির বেশিরভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষাই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও গ্রামগুলিতে করা হয়েছিল। সবই ছিল মাইক্রো লেভেল গবেষণা প্রচেষ্টা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে তিনি দারিদ্র্যের কারণ বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন, ছোট ছোট পর্যায়ে বিষয়গুলো ভাগ করে কাজ করলে দারিদ্র্য দূর করা অনেক সহজ হতে পারে।

অভিজিৎ ব্যানার্জিকে ব্যক্তিগত জীবনে ‘মাটির মানুষ’ বলেই মনে করেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিরূপ সরকার।

অভিরূপ বলেন, উন্নয়ন অর্থনীতিতে, মানুষ কেন দরিদ্র তা নিয়ে প্রচুর তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করতে পারে, দারিদ্র্য রয়েছে কারণ সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বা সরকার কাজ করছে না। তবে অভিজিৎ ব্যানার্জির মতে, এগুলি সমস্তই গ্র্যান্ড থিওরি।

অভিরূপ বলেন, অভিজিৎ বিশ্বাস করেন, এমন কোনো তত্ত্ব থাকতেই পারে না যা অনুন্নয়নকে ব্যাখ্যা করতে পারে। তার অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মাইক্রো সমস্যাগুলির মাইক্রো-সমাধান রয়েছে, প্রসঙ্গভিত্তিক সমাধান, সমস্যাভিত্তিক সমাধানও রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ হিসেবে জীবনের প্রথমদিকে মূলত একজন তাত্ত্বিক ছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু এস্তার দুফলো তার ছাত্রী হওয়ার পরে তার কাজের ধরনে পরিবর্তন আসে বলে জানিয়েছেন দীপঙ্কর দাশগুপ্ত। এরপরে অভিজিৎ নিখুঁতভাবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির দিকেই নজর দেন।

অভিজিতের বাবা প্রয়াত দীপক ব্যানার্জিও ছিলেন অর্থনীতিবিদ এবং তার মা নির্মলা ব্যানার্জিও একজন অর্থনীতিবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *